অলাভজনক সংগঠন পরিচালনায় ফোকাস ধরে রাখাটা জরুরি
BY
Nadim Majid
ফোকাস। অলাভজনক সংগঠন পরিচালনায় ফোকাস ধরে রাখাটা জরুরি। আমরা পথশিশুর শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। আমাদেরকে কেউ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে বললে আমরা কাজ করবো না।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে অলাভজনক সংগঠন মজার ইশকুল। ইতোমধ্যে সারাদেশে ১২ টি শাখায় ২১০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। ২১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০৫০ শিক্ষার্থী নিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নিয়ে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ান আরিফের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ
প্রশ্ন: লাভজনক সংগঠন ও অলাভজনক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য কি?
আরিয়ান আরিফ: যে কোনো লাভজনক সংগঠনে মালিক এবং পরিচালকগণ সংগঠনের লাভের টাকা নিজেরা নিতে পারে। কিন্তু অলাভজনক সংগঠনে লাভের টাকা মালিক এবং পরিচালকগণ নিতে পারে না। লাভের টাকা সংগঠনে পুনরায় বিনিয়োগ করতে হয়।
প্রশ্ন: একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে কেন অলাভজনক সংগঠনে রূপান্তর করা প্রয়োজন?
আরিয়ান আরিফ: যে কোনো অলাভজনক সংগঠন কোনো এলাকা, অঞ্চল, দেশ এবং বিশ্বে বড় রকম প্রভাব ফেলতে পারে। একটি সংগঠন দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকলে তা বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করতে পারে। যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অলাভজনক সংগঠনে পরিণত করতে পারলে যেমন সংগঠনটির কাজ দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখার সুযোগ থাকে। আবার, এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: একটি অলাভজনক সংগঠন টিকিয়ে রাখাার জন্য কোন কোন বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার?
আরিয়ান আরিফ: যে কোনো সংগঠন টিকিয়ে রাখতে চাইলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হয়।
প্রথমত, ফান্ড। যে কোনো সংগঠন টিকে থাকে ফান্ডের সরবরাহের মাধ্যমে। ফান্ডে ঘাটতি থাকলে সংগঠনের অনেক কাজে কাঁটছাঁট করতে হয়। এমনকি সংগঠন টিকে নাও থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক ব্যবস্থাপনা। যার সংগঠন পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই, তাকে যদি কেউ কোটি টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়। তাহলে কিন্তু সে ঠিকমত সংগঠন পরিচালনা করতে পারবে না। আবার, আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিকমত না থাকলে যে কোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আমাদের সংগঠন পরিচালনায় আয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ক্যাশ টাকা রিসিভ করি না। আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়।
আবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা আগে যে কোনো কাজের বাজেট নিয়ে থাকি। তারপর সে কাজের বিপরীতে চেকের মাধ্যমে আমরা খরচ করে থাকি।
তৃতীয়ত, মানুষ ব্যবস্থাপনা। আপনি যাদেরকে নিয়ে কাজ করবেন, তাদেরকে অবশ্যই আপনার সংগঠনের চিন্তার সাথে একমত হতে হবে। যাকে যে পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তাকে সে দায়িত্ব পালন করতে পারতে হবে।
চতুর্থত, ফোকাস। অলাভজনক সংগঠন পরিচালনায় ফোকাস ধরে রাখাটা জরুরি। আমরা পথশিশুর শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। আমাদেরকে কেউ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে বললে আমরা কাজ করবো না।
পঞ্চমত, কমিউনিটি অ্যাঙ্গেজমেন্ট। আপনার সংগঠন যে এলাকায় কাজ করে, সে এলাকার জনসাধারণকে আপনার কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে। আপনি কি কাজ করেন, সে সম্পর্কে তাদের ভাল ধারণা করতে হবে। আমরা প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে ত্রিশ মিনিটের একটি সভা করে থাকি। সেখানে তাদের কাছ থেকে মতামত নিই। এমনকি কোনো শিক্ষক সম্পর্কে কোনো শিক্ষার্থীর অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাই।
আবার, কোনো শিক্ষার্থী একদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে সে কেন আসে নি, তা জানার জন্য আমাদের শিক্ষকেরা সে শিক্ষার্থীর বাসায় যায়। এভাবে আমরা কমিউনিটি অ্যাঙ্গেজমেন্টের ব্যবস্থা করে থাকি।
প্রশ্ন: আপনারা আপনাদের প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা কিভাবে নিশ্চিত করে থাকেন?
আরিয়ান আরিফ: স্বচ্ছতার বিষয় আসলে প্রথমে আসবে টাকা পয়সার কথা। আমাদের সংগঠন পরিচালনায় আয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ক্যাশ টাকা রিসিভ করি না। আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়।
আবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা আগে যে কোনো কাজের বাজেট নিয়ে থাকি। তারপর সে কাজের বিপরীতে চেকের মাধ্যমে আমরা খরচ করে থাকি।
আবার, আমরা সবসময় ডাটা ট্রান্সপারেন্ট রেখে থাকি। আমাদের একটি প্রোগ্রাম আছে ‘স্পন্সর এ চাইল্ড’ নামে। যে কেউ চাইলে মাসে ১৫০০ টাকা করে একজন শিশুর শিক্ষার জন্য স্পন্সর হতে পারে। আমাদের স্কুলে স্পন্সরকৃত শিশুর বিপরীতে স্পন্সরের নাম ও আইডি থাকে। এ প্রোগ্রামে স্পন্সর হওয়া সকল ব্যক্তিকে তার স্পন্সর হওয়া শিশুর বিপরীতে আমরা প্রতিদিন তার ইমেইলে রিপোর্ট পাঠিয়ে থাকি।
স্পন্সর করা ব্যক্তিরা তাদের শিশুর সাথে কথা বলার জন্য অফিসকে আগে থেকে জানিয়ে স্কুলে আসতে পারে। এমনকি ভিডিওকলেও কথা বলতে পারে। তবে আমরা একটি বিষয় নিশ্চিত করি, কোনো স্পন্সর ব্যক্তি স্পন্সরকৃত শিশুর এডুকেশনাল গার্ডিয়ান, বায়োলজিক্যাল গার্ডিয়ান না। তাই, তারা তাদের স্পন্সরকৃত শিশুদের জড়িয়ে ধরতে পারবে না। শিক্ষা স্পন্সর হয়ে বায়োলজিক্যাল অভিভাবক হতে পারবে না।
আমরা প্রতিবছর সময়মত অডিট করে থাকি। আমি বলব, কোনো অলাভজনক সংগঠন-ই যেন অডিট মিস না করে।
আরেকটি বিষয় হল আমরা সবসময় চেষ্টা করি, আমাদের কাছে চাওয়ার আগেই যেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট দিতে পারি।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF সাক্ষাৎকার CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google