ফেসবুক গ্রুপের সমৃদ্ধির জন্য নিত্যনতুন আইডিয়া নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হবে
বাঁশখালীর চেচুরিয়া গ্রামের আবু ওবাইদা আরাফাত। মাধ্যমিকের পর থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাপন শুরু। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স এণ্ড ব্যাংকিং বিষয়ে বিবিএ অনার্স ও এমবিএ সম্পন্ন করে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকে। পাশাপাশি প্রায় দেড় যুগ ধরে (১৬ বছর) লেখালেখি, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত থাকা আরাফাত বাঁশখালী উপজেলার কমিউনিটিভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ‘বাঁশখালী টাইমস ফ্যান ক্লাব’-এর এডমিন এবং বাঁশখালী উপজেলাভিত্তিক কমিউনিটি নিউজপোর্টাল ‘বাঁশখালী টাইমস ডটকম’-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। কমিউনিটিভিত্তিক স্যোসাল মিডিয়া, নিউজপোর্টাল সহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন দেশ ক্যারিয়ারের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- অরণ্য সৌরভ
দেশ ক্যারিয়ার: ‘বাঁশখালী টাইমস ফ্যান ক্লাব’ গ্রুপ তৈরির পেছনের গল্পটা শুনতে চাই-
আবু ওবাইদা আরাফাত: ‘বাঁশখালী টাইমস’ নিউজপোর্টাল প্রতিষ্ঠার পরপরই মূলত এই গ্রুপটি খোলার পরিকল্পনা করি। পোর্টালে পাবলিশ হওয়া খবরের লিংকগুলো পোস্ট করা এবং এলাকার বিভিন্ন খবর যাতে সহজে পাওয়া যায় সেই চিন্তা থেকেই মূলত ‘বাঁশখালী টাইমস ফ্যান ক্লাব’-এর যাত্রা। গাড়িতে বসে খোলা গ্রুপটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। তবে ৭ বছরে এই গ্রুপটি কেবল সংবাদভিত্তিক গ্রুপে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি বৃহৎ লোকাল কমিউনিটি গ্রুপ হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
দেশ ক্যারিয়ার: এটি কবে, কোথায়, কারা শুরু করলেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: বাঁশখালী উপজেলাভিত্তিক কমিউনিটি নিউজপোর্টাল ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা পায়। এরপরই আমি এই গ্রুপটি খুলি। পোর্টালের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আমার সাথে আরো দুজন ছিলেন- আরকানুল ইসলাম ও মেসকাতুল ইসলাম।
দেশ ক্যারিয়ার: গ্রুপটি তৈরির উদ্দেশ্য কী কিংবা ওয়েবপোর্টাল থাকার পরেও কমিউনিটিভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ কেন চালু করলেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: শুরুর দিকে উদ্দেশ্য ছিল পোর্টালে প্রকাশিত নিউজগুলো যাতে সহজে পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে যাতে আমরা সহজে জানতে পারি। সে সূত্র ধরে যাতে আমরা নিয়মিত নিউজ ও কন্টেন্ট তৈরি করতে পারি।
দেশ ক্যারিয়ার: আপনি তো গ্রুপটির এডমিন। আপনি একাই গ্রুপটি পরিচালনা করছেন? পরিচালনার দায়িত্বে আছেন কে কে?
আবু ওবাইদা আরাফাত: গ্রুপ পরিচালনায় এডমিন হিসেবে আমার সাথে আরো দু’জন আছেন- আরকানুল ইসলাম ও মেসকাতুল ইসলাম। মডারেটর হিসেবে আছেন মঈনুল আজীম সোহেল।
দেশ ক্যারিয়ার: এ গ্রুপের মাধ্যমে আপনারা কোন কোন বিষয়গুলো ফোকাস করে থাকেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: শুরুতে এটি ‘বাঁশখালী টাইমস’ পোর্টাল সম্পর্কিত গ্রুপে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এটি বাঁশখালী উপজেলার আপামর মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বলার প্রিয় মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জনপ্রতিনিধি, আমলা, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের সরব উপস্থিতিতে সর্বদা মুখর থাকে এই প্ল্যাটফর্ম। বাঁশখালী উপজেলা ছাড়াও চট্টগ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়েও এই গ্রুপে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে থাকেন। গ্রুপের ফোকাস হিসেবে বলতে গেলে, বাঁশখালীর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, বাঁশখালীর মানুষের আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অর্জনের কথা উঠে আসে। বাঁশখালীর পর্যটন সম্ভাবনা, কৃষি সম্ভাবনা, সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি ইত্যাদি পজিটিভ বিষয়ের পাশাপাশি উঠে আসে জনদুর্ভোগের কথাও। পরিবহন নৈরাজ্য, লোডশেডিং এবং বিভিন্ন অনিয়ম-অনাচারের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখছে এই গ্রুপ। বাঁশখালী এলাকায় কোন কিছু হারিয়ে গেলে, কোন মানুষ নিখোঁজ হলে, কেউ দুর্ঘটনায় পতিত হলে মানুষ সাথে সাথে এই গ্রুপে পোস্ট দিয়ে থাকেন। এতে করে দ্রুত গতিতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়। এককথায় বাঁশখালীর মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সহজ সমাধান পেয়ে থাকেন এই গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে।
দেশ ক্যারিয়ার: একটি উপজেলাভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৩৯,৫০০+। এত সদস্য কিভাবে সংগ্রহ করেছেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: এক দুই তিন করে প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের পরিবারে রূপ নিয়েছে এই গ্রুপ। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের নিয়মিত গ্রুপ মেম্বারগণের। বিভিন্ন সময় যারা পোস্ট করে উপকৃত হয়েছেন তারা নিজ উদ্যোগে গ্রুপের মেম্বার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। পরিচিতদের কাছে ইনভাইটেশন পাঠিয়েছেন। এছাড়া গ্রুপ কর্তৃক বিভিন্ন সৃজনশীল উদ্যোগের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে, এর কারণেও গ্রুপ দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে।
দেশ ক্যারিয়ার: ফেসবুক গ্রুপটিকে একটিভ রাখার জন্য আপনারা কিভাবে কাজ করেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: এডমিন প্যানেল হিসেবে আমাদের প্রধান কাজ পোস্ট এপ্রুভের ক্ষেত্রে ফিল্টারিং করা। আমরা বস্তনিষ্ঠ ও জনগুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে বিভিন্ন দিক বিবেচনাপূর্বক এপ্রুভ করে থাকি। যার কারণে এমনও হয়ে থাকে বেশিরভাগ পোস্ট আমাদের ডিক্লাইন করতে হয়। গ্রুপ এক্টিভ রাখার জন্য আমরা নিজেরাও বিভিন্ন ইস্যুতে পোস্ট দিয়ে থাকি, বাঁশখালী টাইমস পোর্টালে প্রকাশিত নিউজের লিংক পোস্ট করা হয়। এছাড়া আমরা বছরজুড়ে বিভিন্ন উপলক্ষকে সামনে রেখে কুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও অনলাইনে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। বাঁশখালীসহ জাতীয় পর্যায়ের আলোকিত ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় লাইভ প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকি। এছাড়াও বার্ষিক প্রকাশনা হিসেবে একটি বর্ধিত কলেবরের ম্যাগাজিন প্রকাশ হয় যেখানে বাঁশখালী বিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখি স্থান পায়। গতবছর আমরা ৩০টি সামাজিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে বাঁশখালীজুড়ে মাসব্যাপী পুকুরে ডুবে মৃত্যুরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছিলাম। এই কার্যক্রমটি দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল।
দেশ ক্যারিয়ার: দিন যত যাচ্ছে, ফেসবুকও তার নীতিমালা আপডেট করছে। আপনারা তাদের নীতিমালা সম্পর্কে কিভাবে জানেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: ফেসবুকের কমিউনিটি স্টান্ডার্ডস নিয়ে আমাদের পড়াশুনা আছে। এডমিনদের মধ্যে এসব নিয়ে নিয়মিত আলাপ আলোচনা হয়। এছাড়া ফেসবুক অনেক সময় নোটিফিকেশনের মাধ্যমে নীতিমালা আপডেটের বিষয়ে জানিয়ে দেন।
দেশ ক্যারিয়ার: ফেসবুক গ্রুপে কনটেন্ট ভায়োলেশন এড়িয়ে চলার জন্য আপনারা কি কি পলিসি ব্যবহার করে থাকেন?
আবু ওবাইদা আরাফাত: এত বড় গ্রুপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কন্টেন্ট ভায়োলেশন এড়িয়ে চলা সত্যিকার অর্থে দূরহ কাজ। তবু আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে নজর রাখি। এপ্রুভের ক্ষেত্রে যেমন সতর্ক থাকি, ঠিক তেমনি কে কী কমেন্ট করছে সেদিকেও খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। আমরা কিছু আপত্তিকর শব্দ এলার্টের জন্য কী ওয়ার্ড হিসেবে সেট করে রেখেছি। যার মাধ্যমে যে কেউ উক্ত শব্দগুলো ব্যবহার করলেই আমরা নোটিফিকেশন পেয়ে যাই। খুব সাধারণ পলিসি হিসেবে আমরা রক্তযুক্ত ছবি, নাম্বারযুক্ত আইডি, সন্দেহযুক্ত লিংক এসব পোস্টও এপ্রুভ করা থেকে বিরত থাকি।
দেশ ক্যারিয়ার: আপনাদের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে, এমন দুইটি ঘটনা সম্পর্কে বলুন-
আবু ওবাইদা আরাফাত: গ্রুপের মাধ্যমে কেউ সামান্যতমও উপকৃত হয়েছেন এটা শুনলে আমাদের অনেক ভালো লাগা কাজ করে। এই আত্মতৃপ্তির অনুভূতি আসলেই অতুলনীয়। আর এই সুখটা আমরা প্রায় নিয়মিত পেয়ে থাকি। উপকৃত হওয়ার ঘটনা দুইটার মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কারণ একই ধরণের অনেকগুলো প্রাপ্তির খবর আমরা নিয়মিত পাই। যেমন: কেউ সিএনজিতে ব্যাগ হারিয়েছে, কারো শিশু হারিয়েছে, কারো গাড়ি চুরি হয়েছে, কেউ অযথা হয়রানির শিকার হয়েছে, কোথাও রাস্তাঘাট- ব্রীজের পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে; পোস্ট দেয়ার পর এসব সমস্যা অধিকাংশ সময়েই সমাধান হয়ে গেছে দ্রুত সময়ে।
দেশ ক্যারিয়ার: যারা ফেসবুক গ্রুপভিত্তিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা সেবামূলক কাজ করতে চায়, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ-
আবু ওবাইদা আরাফাত: বড় ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। একটি ভুল পোস্ট এপ্রুভ হয়ে গেলে তিলে তিলে গড়া বৃহৎ গ্রুপের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই এপ্রুভের ক্ষেত্রে অনেক যাচাই-বাছাই করতে হবে। গ্রুপে এডমিন ও মডারেটরের আধিক্য কমাতে হবে। এডমিন মডারেটরের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বুঝাপড়া, সম মনমানসিকতা লালনের অধিকারী হলে কাজ করা সহজ। গ্রুপের সমৃদ্ধির জন্য নিত্যনতুন আইডিয়া নিয়ে নিয়মিত ভাবতে হবে। সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব সবসময় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে সহযোগিতা করবে।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF সাক্ষাৎকার CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google