গেইম ডেভেলপার
BY
Roby Hossain
বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া শিশুরা মোস্তফা গেমস খেলে বড় হয়ে উঠেছে বললে ভুল বলা হবে না। মোস্তফা গেমস ছাড়া সে সময় জনপ্রিয় ছিল বিভিন্ন ভিডিও গেম কনসোল। তারপর প্রযুুক্তির নানা রকম পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রিও বদলে গেছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশে কম্পিউটার গেমস হিসেবে বাইক সিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পরে একে একে মানইক্রাফট, কল অফ ডিউটি, পাবজিসহ অসংখ্যা গেমে মজে যায় শিশু ও তরুণেরা।
পৃথিবীতে বর্তমানে গেম খেলছে এরকম মানুষের সংখ্যা তিন বিলিয়নের বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির ভ্যালু ৩৪৭ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল মার্কেটে প্রতি বছর নতুন নতুন গেম নিয়ে আসেন গেম ডেভলাপাররা। তাদের ক্রিয়েটিভিটির সাথে প্রযুক্তির জ্ঞানের সম্মিলিনে একটা গেমের কনসেপ্ট তেরি, প্রোগ্রামিং, টেস্টিং ও সেই গেম মার্কেটে প্রমোট করা পুরো প্রক্রিয়াতেই যুক্ত থাকেন একজন গেম ডেভলাপারার।
গেমটি দেখতে যাতে ম্যাড়মাড়ে না হয় সেজন্যে তাকে গ্রাফিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজিন্সে দক্ষ হতে হয়।
গেম ডেভলাপার কি করে
গেমের ডিজাইন কি হবে, চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য কি হবে ও সংলাপ কি থাকবে সেগুলো বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের (যেমন সি++, সি#, জাভা) মাধ্যমে কোডিং করে গেমটি তৈরি করাই একজন গেম ডেভলাপারের কাজ। একইসাথে গেমের এনভায়রমেন্ট কেমন হবে, এনিমেশন, ভিজুয়াল ইফেক্টের কাজও তাকে করতে হয়।
গেম ডেভলাপার হতে হলে
গেম ডেভলাপার হওয়ার জন্যে কম্পিউটার সাইন্স ও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রী নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ না। যারা শুরু থেকেই গেম ডেভলাপার হিসেবে কাজ করতে চান তারা প্রোগ্রামিং, কম্পিউটার গেমস ডেভলাপমেন্ট ও ডিজাইনসহ ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্সেও পড়ালেখা করতে পারেন।
গেম ডেভলাপমেন্টের জন্যে ম্যাথ ও ফিজিক্সের বিভিন্ন থিওরি ভালভাবে বোঝা জরুরী।
যাদের মিডিয়া, এনিমেশন, আর্টে দক্ষতা আছে তারা গেম ডেভলাপমেন্টে কাজ করার সুযোগ আছে। গেমটিকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্যে দরকার হয় প্রোগ্রামিং নলেজের। গেম ডেভলাপমেন্টের জন্যে সি#, সি++, জাভাসহ অনেক প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার হয়।
গেম ডেভলাপমেন্টের ভবিষ্যৎ
শুধু আমেরিকাতেই ২০২২ সালে গেম খেলার জন্যে মানুষ ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছে। একই বছর এপ স্টোর থেকে ৯০ বিলিয়নের বেশি গেমস ডাউনলোড করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালে শুধুমাত্র মোবাইল গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রির সাইজ হবে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উন্নতি, ক্লাউড কম্পিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ক্রস রিয়ালিটি এক্সপেরিয়েন্সের ব্যবহারের কারণে এখন মানুষের চাহিদা পূরণে বিভিন্ন আধুনিক গেম তৈরি সম্ভব হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি কাস্টমাইজড হওয়অর কারণে খুব দ্রুত এই গেমগুলো মানুষ লুফে নিচ্ছে।
ফলে গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রির এই উত্থান সহসাই থামবে না।
গেম ডেভলাপারদের বেতন
আন্তর্জাতিক বাজারে একজন গেম ডেভলাপারে বেতন বছরে ৬০ হাজার ডলার থেকে শুরু করে এক লাখ ডলারের বেশিও হতে পারে। বাংলাদেশে একজন গেম ডেভলাপারের বেতন শুরুতে ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে। তবে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখনো গেম ডেভলাপমেন্টের মার্কেট খুব বেশি বড় হয়নি।
যেসব টুলের কাজ ও স্কিল দরকার হয়
গেমের ডিজাইনিং, গ্রাফিক্স, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কে ভাল ধারণা ছাড়া গেম ডেভলাপমেন্ট করা সম্ভব নয়। এছাড়ও স্কিল হিসেবে প্রবলেম সলভিং, ক্রিয়েটিভিটির প্রয়োজন আছে।
কোথায় চাকরি পাওয়া যাবে
গেম ডেভলাপমেন্টের জন্যে বিশ্ববিখ্যাত অনেক গেম ডেভলাপমেন্ট স্টুডিও (যেমন Ubisoft, Electronic Arts, Naughty Dog ) আছে। তারা গেম ডিজাইনার, প্রোগ্রামার, আর্টিস্ট ও রাইটার হায়ার করে থাকে।
দেশ ক্যারিয়ারের প্রকাশক প্রতিষ্ঠান বাংলা পাজেল লিমিটেডও গেইম তৈরি করে থাকে।
এছাড়াও ইনডিড, গ্লাসডোর ও লিংকডিনের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানগুলো গেম ডেভলাপার হায়ার করে থাকে।
গেম ডেভলাপমেন্ট শিখবেন কিভাবে
গেম ডেভলাপমেন্টকে পেশা হিসেবে নেওয়া যাদের উদ্দেশ্য তারা গেম ডেভলাপমেন্টের উপর কোন ডিগ্রী নিতে পারেন। এছাড়াও কম্পিউটার সাইন্স, ম্যাথ ও ফিজিক্সের ডিগ্রীও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
অনলাইনে গেম ডেভলাপমেন্ট শেখার জন্যে ইউডেমি, কোর্সেনরা ও খান একাডেমীতে অনেক ধরনের কোর্স আছে। নিজে নিজে গেম ডেভলাপমেন্ট শেখার জন্যে ইউটিউব ভাল একটি প্লাটফর্ম। ইউটিউবে গ্রাফিক্স ও প্রোগ্রামিং শেখার পাশাপাশি ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরির মাধ্যমে শেখার কাজটি এগিয়ে নিতে হবে।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরিচিতি CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google