ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
BY
Roby Hossain
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শব্দটা এখন সবার মুখে মুখে। যাদের স্মার্টফোন আছে ফেসবুকে বা ইউটিউবে ভিডিও স্ক্রল করতে করতে নিজেই কন্টেন্ট ক্রিয়েট করার কথা মাথায় আসেনি এরকম মানুষ খুব কমই আছে। ফিচার ফোনের যুগ পেরিয়ে মাল্টিমিডিয়া ফোন হাতে আসলেও বাংলাদেশে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ধারণা তৈরি হতে আরো অনেক সময় লেগেছে।
মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হওয়ার পরই কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে রীতিমত বিপ্লব ঘটে গেছে।
ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কারা
একজন ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কোন বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে সেই চিন্তা থেকে শুরু করে একেবারে প্রোডাকশন পর্যন্ত সব কাজ নিজেই করে থাকে। আইডিয়া জেনারেট করা, কন্টেন্ট প্লানিং, ভিডিও রেকর্ড করে সেটা এডিট করে বিভিন্ন প্লাটফর্মে (ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক) পোস্ট করা সব কাজই তাকে করতে হয়।
শুধু ভিডিও বানালেই হবে না তাকে তার টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে চিন্তা করতে হয়। কোন ভাষায় বললে তারা বেশি আগ্রহী হবে, কোন জিনিসটা তারা জানতে চায় এর সবকিছুই একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে ভাবতে হয়।
ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে গেলে
সাধারণত শখ থেকেই মানুষ ভিডিও তৈরি করা শুরু করে। এরপর কাজ করতে করতে সেটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে ফেলে। যাদের মাথায় সারাক্ষণ নানা রকম গল্প ঘুরে আর সেগুলো মানুষকে জানাতে চান তারা নিজেই নানাভাবে সেটা প্রকাশ করেন। কেউ লিখে কেউবা ভিজুয়াল মাধ্যমে। লিখার বিষয়টা যেরকম সহজ কলম আর খাতা হলেই হয়ে যায় ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েশন অতটা সহজ না। এখানে গ্যাজেট, সেটাপ, ভিডিও এডিটিং স্কিলের দরকার হয়।
তাই ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা থাকার পাশাপাশি নতুন নতুন জিনিস শেখার আগ্রহ থাকলে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের জার্নি সহজ হয়ে উঠে।
আর ক্যারিয়ার হিসেবে চিন্তা করতে গেলে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েশন থেকে অনেক দিকেই মুভ করা যাবে। যেমন ভিডিওগ্রাফার, ভিডিও এডিটর, স্ক্রিপ্টরাইটার, ডিরেক্টর ও সাউন্ড ডিজাইনারসহ আরো অনেকভাবেই কাজ করার সুযোগ থাকে।
কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ভবিষ্যৎ
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মার্কেট ভ্যালু ছিল ২৫.৬ বিলিয়ন ডলার। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও মানুষ ভিডিও প্রযুক্তির কথা কল্পনা করতে পারত না। কিন্তু এখন ভিডিও ছাড়া আমরা আধুনিক জীবন কল্পনাই করতে পারছি না। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের উন্নতির কারণে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আগে মানুষ দৈনিক পত্রিকা কিনত। কিন্তু এখন খুব কম মানুষই বাসায় পত্রিকা রাখেন। বর্তমানে ৭২% মানুষ খবর পড়ার জন্যে টেক্সটের চেয়ে ভিডিওওকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফেসবুকে আমাদের শেয়ার করা কন্টেন্টের ৮৩% হলো ভিডিও। আর কোন প্রোডাক্ট কেনার ক্ষেত্রে ৭৬% মানুষ ভিডিও দেখার পরই কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
ফলে সামনের সময়টা ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের বলা যায়।
বেতন
অভিজ্ঞতা ও কাজের লোকেশনের ভিত্তিতে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের বেতন নির্ভর করে থাকে।
আমেরিকাতে একজন ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ডলারের উপরে। বাংলাদেশে এত বেশি বেতন না দিলেও বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও এখন ভিডিও মার্কেটিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এড এজেন্সি গড়ে উঠছে। ভিডিও মার্কেটিং করার জন্যে নতুন নতুন পদ তৈরি হচ্ছে। ভাল দক্ষতা থাকলে বাংলাদেশের বাজারে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্যে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করে মাসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
যাদের থ্রিডি এনিমেশন, এডিটিং সফটওয়ারে ভাল দক্ষতা আছে তারা এর বেশিও উপাজর্ন করতে পারবে।
এছাড়াও নিজের কন্টেন্ট থাকলে ফেসবুক ও ইউটিউবে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা যাবে।
ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে যা জানা লাগবে
ভিডিও এডিটিং করার জন্য এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, আফাটার ইফেক্টের কাজ শেখা যেতে পারে। এছাড়াও ডিসএলএল ক্যামেরা পরিচালনা করা বোঝা, লাইট, ট্রাইপড সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী।
এর সাথে স্ক্রিপ্ট লিখতে জানতে হবে। এডোবি ফটোশপ বা ক্যানভার মাধ্যমে গ্রাফিক্স সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখতে হবে।
কোথায় চাকরি পাওয়া যাবে
সম্প্রতি নীল নাফিস নামে বাংলাদেশী একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ২০ বছর বয়সে মাসে ৭ লাখ টাকা ইনকাম করে আলোচনায় এসেছেন। তিনি লিংকডিনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ছোট ছোট ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে কমিউনিকেট করে তাদের কন্টেন্ট এডিট করার কাজ পেয়েছেন।
লিংকডিন ছাড়াও ইনডিড, গ্লাসডোর ওয়েবসাইটসহ আপওয়ার্ক, ফাইভারেও কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজের চাহিদা আছে।
কিভাবে শিখব কন্টেন্ট ক্রিয়েশন
ভিডিও কন্টেন্ট শেখার জন্যে অনলাইনে প্রচুর ফ্রি রিসোর্স আছে। পেইড রিসোর্সের ক্ষেত্রে ইউডেমিতে ভিডিও এডিটিং নিয়ে অনেক কোর্স আছে। শুধু কোর্স করলেই হবে না নিজেকেই এক্ষেত্রে প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে। বেটার কোন একজন মেন্টরের মাধ্যমে কাজ শুরু করা। তার সাথে থেকে কাজ শেখা। ছোট ছোট ভুলত্রুটি গুলো শুধরে নেওয়া।
রাতারাতি কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের জার্নিতে ভাল ফল আশা করা যাবে না। এটা প্রতিনিয়ত শেখার ব্যাপার। ট্রায়ায় এন্ড এরর মেথডে শিখতে শিখতে একটা সময় যে কেউই বুঝতে পারবে তার আর কতটা শেখা দরকার।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরিচিতি CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google