খুব বেশি সম্ভাবনা আছে আপনি এই লেখাটা মোবাইল ফোন থেকে জিমেইল এপের মাধ্যমে পড়ছেন। পৃথিবীতে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬.৩ বিলিয়ন। ২০২৭ সাল হতে হতে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাড়াবে ৭.৬ বিলিয়নে। এই বিশাল সংখ্যাক মানুষের জীবনকে আরো সহজ করার জন্যেই প্রতিদিন নিত্য নতুন এপ যুক্ত যুক্ত হচ্ছে। একজন মানুষ দিনে নয় বার কোনো না কোন এপ ব্যবহার করে থাকেন।
২০২২ সালে শুধু ২ মিলিয়ন গেমিং এপস যুক্ত হয়েছে প্লে স্টোরে। মোবাইল এপের পরিবর্তনের উদাহরণ দিতে গেলে যদি আমরা ২০১২ সালের ফেসবুক ও বর্তমানের ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের সাথে তুলনা করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারব এই পরিবর্তন আমাদের জীবনকে কতটা বদলে দিয়েছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে মার্কেটিং, পড়ালেখা, ও সামাজিক আন্দোলনসহ অনেক কিছুই আজ মোবাইলের বিভিন্ন এপের মাধ্যমেই হচ্ছে। গেল বছর মোবাইল এপের মার্কেট ভ্যালু ছিল ২০৬ বিলিয়ন ডলার।
ফোনে বা কম্পিউটারে আমরা যেসব এপ ব্যবহার করি সেগুলো তৈরির পেছনে কাজ করেন একজন এপ ডেভলাপার। যারা মোবাইলের জন্যে এপ তৈরি করে থাকেন এই ব্লগে তাদের নিয়েই আলোচনা করব।
একজন মোবাইল এপ ডেভলাপার এপের ডিজাইন, তৈরি করা ও মেইন্টেইন করার কাজ করে থাকেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাকে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন ও ডাটাবেজ ম্যানেজম্যান্ট সম্পর্কে জানতে হয়।
মোবাইল এপ ডেভলাপার কি করে
প্রত্যেকটা মোবাইল এপের কাজই মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে তোলা। কোনো না কোনো সমস্যার সমাধান দেওয়া। উন্নত বিশ্বে ট্রেনের এপগুলোতে দেশের প্রত্যেকটি রুটের প্রত্যেকটি ট্রেনের লাইভ আপডেট মোবাইল এপের মাধ্যমে জানা যায়। যাত্রা পথে কতটি স্টেশন থাকবে, মোট দূরত্ব কত কিলোমিটার, কোন প্লাটফর্মে ট্রেন দাড়ানো আছে, কত মিনিট লেট, ট্রেনের কোন আসন কোথায় আছে, কোন ধরনের আসনের কত ভাড়া সবই মোবাইল এপের মাধ্যমে জানা যায়।
এপ তৈরির জন্যে ডেভলাপারকে আগে জানতে হবে কোন উদ্দেশ্যে এপটি তৈরি করা হবে। যদি টেকনিক্যালি সেই সমস্যার সমাধান এপের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে এপটি দেখতে কেমন হবে ও কিভাবে কাজ করবে সেই পরিকল্পনা করতে হয়। তারপর প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে এপটি তৈরি করে এপটি এপ স্টোরে দিতে হয়।
পুরো প্রক্রিয়াতে যুক্ত থাকেন এক বা একাধিক এপ ডেভলাপার।
মোবাইল এপ ডেভলাপার হিসেবে কে কাজ করতে পারে
এপ ডেভলাপমেন্টের কাজ করতে গেলে বিশেষ কোনো ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই। যাদের কম্পিউটার সাইন্স ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রী আছে তাদের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, এলগরিদম ও সফটওয়ার ডেভলাপমেন্টের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকে। কিন্তু আগ্রহ থাকলে এগুলো যে কেউ শিখে ফেলা সম্ভব।
যারা গ্রাফিক্স ও ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন তারাও এপ ডেভলাপমেন্টের কাজে যুক্ত হতে পারবেন।
মোবাইল এপ ডেভলাপমেন্টের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে পৃথিবী ভার্চুয়াল বাস্তবতার যুগে প্রবেশ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির কারণে গেমিং, শিক্ষা, হেলথ ও বিজনেস ইন্ট্রাস্ট্রিতে নানা করম পরিবর্তন আসছে। এতে করে প্রতিনিয়ত মোবাইল এপের মার্কেটে বদলে যাচ্ছে।
মানুষ এখন আরো বেশি পার্সোনালাইজড রিকমেন্ডেশন পাচ্ছে কোন জিনিসটা তার কেনা দরকার। খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা আগের চেয়ে ভাল প্রেডিকশন পেয়ে যাচ্ছে। মেশিন লার্নিংয়ের অগ্রগতি যেভাবে শুরু হয়েছে এপ ইন্ট্রাস্ট্রিতে এক নতুন দুনিয়ায় পা রাখছে।
২০২১ সালের ডাটা অনুসারে সেই বছর ইনস্টল করা হয়েছে মোট ২৩০ বিলিয়ন এপ। এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
বেতন কত
আমেরিকাতে একজন মোবাইল এপ ডেভলাপারের বাৎসরিক বেতন সর্বোচ্চ দেড় লাখ ডলার হতে পারে। উন্নত বিশ্বে মোবাইল এপ ডেভলাপারের চাহিদা খুব বেশি। যদি রিমোট জবও হয়ে থাকে তাহলেও অনেক ভাল বেতনে এপ ডেভলাপার হিসেবে কাজ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে শুরুতে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করতে হয়। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরবর্তীতে এই বেতন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
যে স্কিল দরকার
কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজের উপর দক্ষতা ছাড়া এই ফিল্ডে ভাল কাজ করা সম্ভব নয়। এন্ড্রয়েড এপ ডেভলাপমেন্টের জন্যে জাভা খুব উন্নত একটি ল্যাংগুয়েজ। কোটলিন বর্তমানে এন্ড্রয়েড এপ ডেভলাপমেন্টের জন্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। আইফোনের জন্যে সুইফট ল্যাংগুয়েজটি ব্যবহার করছে।
এন্ড্রয়েড স্টুডিও, এক্সকোড, ভিজুয়াল স্টুডিও, ফায়ারবেস ও রিয়েক্ট নেটিভ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়।
মানুষ যাতে এপটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেজন্যে ইউজার ইন্টারফেস ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।
কোথায় চাকরি পাওয়া যাবে
এপ ডেভলাপারের কাজ পাওয়ার জন্যে লিংকডিন একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। নিজের কাজগুলো নিয়োগদাতাদের কাছে তুলে ধরতে পারলেই দ্রুত কাজ পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ইনডিড, গ্লাসডোর, মনস্টারসহ জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ফাইভার ও আপওয়ার্কে এপ ডেভলাপারের কাজের চাহিদা আছে।
কিভাবে শিখবেন এপ ডেভলাপমেন্ট
মোবাইল এপ ডেভলাপমেন্ট শেখার জন্যে বিশেষ কোনো ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই। যদি অনলাইনে শিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কোর্সেরা, এডেক্সসহ দেশের অনেক প্লাটফর্মেই আপনি কোর্স পেয়ে যাবেন। নিজে নিজে শেখার জন্যে ইউটিউব, ডব্লিউথ্রিস্কুলের সহায়তাও নিতে পারেন।
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ সাথে সাথে অন্যরা কি করছে, নতুন কি পরিবর্তন এসছে সেগুলো খোঁজ রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এপ ডেভলাপার হিসেবে ইন্টার্ন হিসেবেও কাজ শেখার সুযোগ থাকে।
OTHER POSTS OF পরিচিতি CATEGORY
To comment in this Blog, SignIn with Google