পেশা পরিচিতি: অনুবাদক
BY
Nadim Majid
বান্ধবীরা যখন আড্ডা দেয় কোন সিনেমায় কার অভিনয় কেমন হল, সেখানে আফরোজাকে দেখা যায় কোনো ইংরেজি বইয়ে ডুবে থাকতে। বিশ্ববিদ্যালয় শেষে বাসায় গেলেও অবসর সময়ে টিভি না দেখে দেখা যায় বই পড়তে।
একদিন ফেসবুক একটি পোস্ট দেখে সে। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নেয়া হচ্ছে খণ্ডকালীন অনুবাদক। একটি ইংরেজি বইকে বাংলায় অনুবাদ করে দিতে হবে।
আফরোজাও ভাবল, বই পড়তে ভাল লাগে। অনুবাদক হতে দোষ কি! অবসরে কিছু এক্সট্রা টাকা আয় করলে মন্দ নয়। তাদেরকে নিজের আগ্রহের কথা ইমেইল করলে তারা বইটির প্রথম এক পৃষ্ঠার ছবি পাঠায়। বলে, এ পৃষ্ঠার অনুবাদ সন্তোষজনক হলে ১১২ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ বইটি তাকে দিয়েই অনুবাদ করাবে।
তাদেরকে অনুবাদের নমুনা পাঠালে তারা গ্রহণ করে। পুরো বইটি অনুবাদের কাজটি তাকেই দেয়। ঘরে বসে অনুবাদের কাজ করে পাঠিয়ে দেয় তাদের ইমেইল।
আফরোজার মত অনেকেই বর্তমানে অনুবাদকের কাজ করছেন ঘরে বসে। এ পদে বেশিরভাগ ব্যক্তি-ই ঘরে বসে কাজ করতে পারেন। পানও সম্মানজনক সম্মানী।
সময়ের প্রেক্ষিতে "অনুবাদক" চ্যালেঞ্জিং পেশা হলেও পূর্ণকালীন পেশাদার অনুবাদকের অভাব থাকায় কাজের সুযোগ প্রচুর।
আবার, এ নিয়ে অনেকের ভুল বুঝাবুঝিও আছে। ভাবে, দুইটি ভাষার মোটামুটি দখল থাকলেই বুঝি অনুবাদক হওয়া যায়। বিষয়টি আসলে এমন নয়। বাস্তবে, দুই ভাষার ওপর দক্ষতার পাশাপাশি কিছু বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। প্রথমেই বলব ‘সোর্স ল্যাঙ্গুয়েজ’ বা যেই ভাষা থেকে অনুবাদ করতে ইচ্ছুক, সেই ভাষাটিকে খুব ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেই ভাষার ওপর সহজলভ্য কোনো কোর্স করে ফেলতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ভাষার ওপর নানা দৈর্ঘ্যের কোর্স খুঁজে পাবেন। প্রয়োজনীয় কোর্সটি বেছে নিন। প্রয়োজনে অনুবাদ শেখার জন্য বিশেষায়িত কোর্সগুলোতেও ভর্তি হতে পারেন। ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টার সাহিত্য অনুবাদের জন্য নানা ধরনের কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। এ ছাড়া, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়মিতই অনুবাদ সংক্রান্ত কর্মশালা আয়োজন করে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বিখ্যাত অনুবাদকদের সান্নিধ্যে অনুবাদের নানা ধরনের কায়দা-কৌশল এখানে হাতে কলমে শিখতে পারবেন।
আপনি যদি কোনো বিশেষ শাখার লেখা অনুবাদ করতে আগ্রহী হন, তাহলে সেই শাখায় ব্যবহৃত শব্দ ও পরিভাষা সম্পর্কে ব্যাপক পরিসরে পড়াশোনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত পরিভাষা শব্দকোষগুলো আপনাকে সাহায্য করবে। ভাষার দক্ষতার সঙ্গে কম্পিউটারে কাজ করার দক্ষতা, টাইপিং স্পিড, অনুবাদের টুল ব্যবহারের দক্ষতা জরুরি। এই দক্ষতাগুলো আপনার কাজকে অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।
প্রস্তুতি শেষের পর কাজ পেতে এক অন্য রকম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথম দিকে আপনার ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের মধ্য থেকেই কাজ খুঁজে নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করতে হতে পারে। মনোযোগের সঙ্গে নিজের সেরা প্রচেষ্টাটুকু দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করুন। দেখবেন, পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজের সুযোগ চলে আসবে।
অনেকে সরাসরি জব না করে ফ্রিল্যান্স অনুবাদক হতে চান। ফ্রিল্যান্সিং পেশাগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই খুব ভালোভাবে জানি, এখানে কাজের মান ধরে রাখতে না পারলে খুব বেশি দিন কাজ করা সম্ভব হয় না। কাজেই প্রতিটি ছোট-বড় কাজকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন। কোন কাজের জন্য অনুবাদের কোন ধরনটি অনুসরণ করবেন, তা বুঝে নিন। অনেক প্রতিষ্ঠান আজকাল অভ্যন্তরীণ কাজের সুবিধার্থে পূর্ণ মেয়াদে অনুবাদক নিয়োগ দিয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং করতে না চাইলে সেসব প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সবশেষে বলব, কাজের প্রতি আপনার নিষ্ঠা থাকলে সাফল্য অবধারিত।
পোর্টফোলিও
অনুবাদকের কাজের জন্য নিজের একটি পোর্টফোলিও থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনি একটি দৈনিক পত্রিকার কোনো কনটেন্ট অনুবাদ করে সে কনটেন্ট ও মূল কনটেন্ট একই কনটেন্টলি, ফেসবুক পেইজ বা লিংকডইনে পোস্ট দিতে পারেন। নিজের ওয়েবসাইট থাকলে তা আপনার গুরুত্ব বাড়াতে কাজে লাগবে।
আয়
অনুবাদকের কাজের আয় নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের উপর। আপনি যদি সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আয় পেলে তার পরিমাণ বেশি হয়, আবার থার্ড পার্টি হয়ে কাজ করলে আয়ের পরিমাণ কমে যায়।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরিচিতি CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google