ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনও করতে হবে
BY
Nadim Majid
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনও করতে হবে
পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক অসীম কুমার পাল। পড়াশোনা করেছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইতোমধ্যে মাস্টার্স করেছেন চারটি। দুইটি বাংলাদেশে। দুইটি দেশের বাইরে। প্রথম মাস্টার্স করেছিলেন ইংরেজি বিষয়ে পাবনার অ্যাডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে, দ্বিতীয় মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে, তৃতীয় মাস্টার্স করেছেন ব্রিটেনের নটিংহাম ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষা বিষয়ে এবং চতুর্থ মাস্টার্স করেছেন ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল থেকে টিচিং ইংলিশ টু স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ে। তার পাবলিকেশন্স রয়েছে আটটি। শিক্ষা অন্ত:প্রাণ এ শিক্ষকের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হল এবারের নিউজলেটারে-
বিদেশে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যে বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন?
আমি বিদেশের দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেছি। এদের মধ্যে একটি হলো যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল-এ MSc in Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) বিষয়ে অধ্যয়ন করেছি। আরেকটি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম-এর মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস থেকে MA in Education বিষয়ে অধ্যয়ন করেছি। উল্লেখ্য, দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ই যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত রাসেল গ্রুপ এর সদস্য।
আপনার মাস্টার্স সম্পর্কে কিছু তথ্য দিন
আমি ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল-এ MSc in Teaching English to Speakers of
Other Languages (TESOL) বিষয়ে পড়াশোনার জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়ন পেয়েছিলাম গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের
“বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ” প্রকল্পের
আওতায় বৈদেশিক মাস্টার্স কোর্সে অংশগ্রহণের ফেলোশিপ প্রাপ্তির মাধ্যমে যা MOPA
Fellowship নামে পরিচিত। আর আমি ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম-এর মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস
থেকে MA in Education বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ
পেয়েছিলাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট
প্রজেক্ট (সিইডিপি)-এর মাধ্যমে।
আপনি কখন থেকে মাস্টার্সের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলেন? প্রস্তুতিপর্বে আপনার
দিক থেকে চ্যালেঞ্জ কি কি ছিল?
আমি যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন থেকেই আমার চিন্তাধারা ছিল যে আমি
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা নিব। এজন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উচ্চশিক্ষা
সংক্রান্ত লেখা দেখলেই আগ্রহ নিয়ে পড়তাম আর আমার স্বপ্ন সাজাতাম। এরপরে যখন বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে চাকরি করতাম, তখন সেখানে কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য ভাইভা
পরীক্ষা নিতে দেখতাম। আমারও ইচ্ছা হত, আমিও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ এর জন্য ভাইবা দিব
কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে সে সাহস আর হয়ে উঠে নি। এছাড়া, তখন পত্রিকায়
বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য স্কলারশিপের বিজ্ঞাপন দেখতাম (যেমন, জেডিএস,
অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ডস)। তবে, দেখতাম, বিসিএস ক্যাডারদের জন্য সুযোগ ছিল বেশি সেই স্কলারশিপ।
তখন ভাবতাম, ইস, আমি যদি বিসিএস ক্যাডার হতে পারতাম! এরপর, ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে
(সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে যোগদানের প্রায় ৩ বছর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ এডুকেশন
ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি)-এর অধীনে যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া
ক্যাম্পাসে এমএ ইন এডুকেশন প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হই এবং সফলভাবে মাস্টার্সটি
সম্পন্ন করি ।
এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের “বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ” প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক মাস্টার্স কোর্সে যুক্তরাজ্যে বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল থেকে MSc in Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হই এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর সেশনে পড়তে যাই। গত বছর (২০২২) মাস্টার্সটি সম্পন্ন করলাম।
দেশে গ্রাজুয়েশন করে বাইরের দেশে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করার জন্য একজন শিক্ষার্থীর
কি কি প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন?
সর্বপ্রথম একাডেমিক রেজাল্টের দিকে মনযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এছাড়া, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনও করতে হবে। আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। বিদেশে অধ্যয়নের ব্যাপারে বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে খোঁজখবর নিতে হবে।
পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করার সময় একজন শিক্ষার্থী কি কি সমস্যায় পড়তে পারে?
বিদেশে অধ্যয়নের ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব আছে। বিশেষ করে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়৷ এক্ষেত্রে আমি একটু যোগ করতে চাই, যেহেতু আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি, আমি জানি, বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ও বাস্তবতার কারণে অনেকেই অনার্স-মাস্টার্স করার সময় ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে অধিক মনযোগী থাকে। এতে যেমন একাডেমিক পড়ার প্রতি অনেক অবহেলা করার অভিযোগ আছে, তেমনি পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এছাড়া, বিদ্যমান একাডেমিক কারিকুলামের কারণে গবেষণার প্রতি আগ্রহ এবং দক্ষতার অভাব দেখা যায়। অধিকন্তু, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরধারী অনেকের মাঝে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ঘাটতি ও তা উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা এবং আগ্রহের অভাব দেখা যায়।
আপনার মাস্টার্স জীবনের সুন্দর একটি স্মৃতি সম্পর্কে বলুন
আমি যখন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলে পড়তে যাই, তখন আমার কোর্সে একমাত্র বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আমিই ছিলাম। আর আমাদের শিক্ষকদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাই ছিল না। ফলে, এমন হয়েছে যে তারা হয়ত ভাষা শিক্ষার কোন একটা দিক নিয়ে উদাহরণ দিতে গিয়েছে আর তখন আমার সহপাঠীরা যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে তাদের দেশের নাম উল্লেখ করে উদাহরণ দিয়েছে। কিন্তু কখনোই ক্লাসে উদাহরণ দিতে গিয়ে আমার দেশের কথা কখনই বলত না। তো, ক্লাসে বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা ও আলোচনায় অংশগ্রহণ দেখে ধীরে ধীরে উদাহরণ দিতে গিয়ে আমার দেশের কথা বলা শুরু করে। এটা আমার জন্য খুব ভালো লাগা কাজ করে। এছাড়া, আমি ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল থেকে প্রকাশিত BILT Student Journal এ আমার কোর্স থেকে আমিই একমাত্র পিয়ার রিভিউয়ার হিসেবে মনোনীত হই। এটিও আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি।
এমন একটি ওয়েবসাইট, সোশাল মিডিয়া পেইজ বা পডকাস্ট সাজেস্ট করুন যা শিক্ষার্থীদের
ক্যারিয়ার উন্নয়নে কাজে লাগবে-
দেখুন, আমি নির্দিষ্ট কোন মাধ্যমকে উল্লেখ করতে চাইছি না। কেননা, আমি বিভিন্ন
সময় বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উপকৃত হয়েছি। যেমন, যখন আইইএলটিএস পরীক্ষা দেয়ার কথা ভেবেছি,
তখন British Council-এর ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করেছি বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য। এছাড়া,
ইউটিউবে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও চ্যানেল থেকে ক্যারিয়ার, আইইএলটিএস, বিদেশে উচ্চ শিক্ষা
বিষয়ে তথ্য পেয়েছি।
আরো পড়ুন: ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, কানাডার পোস্ট-গ্রাজুয়েট সাবরিনা রশিদের সাক্ষাৎকার
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF সাক্ষাৎকার CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google