কোরা : প্রশ্নোত্তরের অনলাইন জগৎ
জানার কৌতূহল থেকেই প্রশ্ন করার
প্রবণতা। মানুষের এই প্রবণতা চিরন্তন। ইন্টারনেটের জগতে এই কৌতূহল মেটাতেই জন্ম
হয়েছে অনলাইন প্রশ্নোত্তর প্ল্যাটফর্ম কোরার। নিজের কৌতূহল মেটাতে প্রতিদিন কোটি
কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ঢুঁ মারছেন কোরায়। যে কারণে কোরা এখন বিশাল এক
প্ল্যাটফর্ম।
এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিটি কনটেন্টের প্রণেতা প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারীরা। যেকোনো ব্যবহারকারী এখানে প্রশ্ন করতে পারেন। অন্য ব্যবহারকারীরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।
যেভাবে শুরু
কোরার জন্ম ২০০৯ সালের ২৫ জুন। ফেসবুকের
সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা অ্যাডাম ডি অ্যাঞ্জেলো এর প্রধান উদ্যোক্তা। সঙ্গে
ছিলেন ফেসবুকেরই আরেক ইঞ্জিনিয়ার চার্লি চিভার। শুরুর এক বছর পর তাঁরা কোরাকে
সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের
মাউন্টেন ভিউ শহরে এর সদর দপ্তর।
খুব দ্রুত এটি জনপ্রিয়তা পায়। এতটাই যে উন্মুক্ত করার ছয় মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ভিজিটরের চাপে ওয়েবসাইটে কারিগরি
ত্রুটি দেখা দেয়। যে কারণে প্ল্যাটফর্মের প্রযুক্তিগত উন্নতিতে বাধ্য হন
উদ্যোক্তারা।
প্রশ্নোত্তর দিয়ে শুরু হওয়া কোরায় ২০১৩ সাল থেকে আর্টিকেল প্রকাশও চালু হয়। এর ফলে ব্যবহারকারীরা যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা ছাড়াও নিজের জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে পারেন অন্যদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় কোরা চালু হয়েছে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে। এখন পর্যন্ত সব মিলে ২৪ ভাষায় চালু হয়েছে কোরা।
কোরা কেন এত জনপ্রিয়
যেকোনো বিষয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের, নানা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মানুষের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার জন্যই মূলত
ব্যবহারকারীর কোরাকে পছন্দ করতে শুরু করেন। যেমন ধরুন, আপনি মিসাইল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলেন। চারপাশে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক পাওয়া
কঠিন। যাঁদের পাওয়া যাবে, তাঁরাও হয়তো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কেউ নন।
কিন্তু কোরায় ‘মিসাইল কীভাবে কাজ করে’
প্রশ্নটি পোস্ট করলে হয়তো দেখা যাবে, মার্কিন সেনাবাহিনীর কোনো সাবেক কর্মকর্তা এর
উত্তর দিলেন, যাঁর রয়েছে মিসাইল নিয়ে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা। মূলত এসব কারণেই
কোরা দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রশ্ন আসতে পারে, তথ্য জানার জন্য গুগলসহ নামীদামি সার্চ ইঞ্জিনগুলোর দ্বারস্থ হওয়া যায়। তাহলে
কোরা কেন?
এর উত্তর : কোরা সার্চ ইঞ্জিনের চেয়ে সমৃদ্ধ তথ্য নিয়ে
হাজির হয়। সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে কেবল আগে অনলাইনে প্রকাশিত লেখাগুলোর সন্ধান দেবে। কিছু
প্রকাশিত না থাকলে নিজে থেকে কোনো উত্তর সরবরাহ করতে
পারবে না,
কিন্তু কোরায় প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা উত্তর দিতে
পারেন। তাই হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। অনেকটা সরাসরি কারও কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার
মতো। আবার একই প্রশ্নে উত্তর দিতে পারেন অনেকজন। তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের
মাধ্যমে যুক্তির লড়াইও দেখা যায়।
যে কারণে সার্চ ইঞ্জিনের চেয়ে কোরা বেশি
জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এর ব্যবহারকারী কারা
সারা বিশ্বের ইন্টারনেন্ট ব্যবহারকারীরাই হচ্ছেন কোরার
ব্যবহারকারী। বিনা মূল্যে নিবন্ধন করে যে কেউ কোরা ব্যবহার করতে পারেন। ইংরেজির পর
অন্যান্য ভাষায় চালু হওয়ায় কোরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের আনাচকানাচে। ২০২০ সাল
পর্যন্ত কোরার ব্যবহারকারী ছিলেন ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি।
ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক, সামরিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মহাকাশচারী-সব পেশার মানুষ আছেন ব্যবহারকারীর তালিকায়। ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে দক্ষতা ও আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ থাকে। যার ফলে রোগজীবাণু নিয়ে প্রশ্ন করলে হয়তো দেখা যাবে কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী তার জবাব দিয়েছেন। যা প্রশ্নকারীকে উত্তরটি আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: লেখকের ১২ রকমের আয়
লিখতে পারেন আপনিও
আপনি যে পেশারই হন, কোরায় নিবন্ধন করে
লিখতে পারেন। নিজের কৌতূহল মেটাতে যেমন প্রশ্ন করে উত্তর পেতে পারেন, তেমনি
অন্যদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারেন নিজের দক্ষতা। এ ছাড়া ব্লগিং বা বিষয়ভিত্তিক
আর্টিকেল লেখারও সুযোগ রয়েছে, যা লেখালেখিতে আগ্রহীদের জন্য দারুণ সুযোগ।
প্রকাশিত লেখায় অন্যদের মতামত, মন্তব্য পাওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে কোরা। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিরা অনলাইন
জগতে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য কোরা ব্যবহার করতে পারেন। যেটা কাজের সুযোগ
বৃদ্ধি করবে। যেমন আপনি সফটওয়্যার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশপাশি
জানিয়ে দিলেন, আপনার একটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নিজের ওয়েবসাইট বা পণ্যের জন্য অনলাইন মার্কেটিংয়েরও বড় সুযোগ কোরা। এ ছাড়া এতে আছে মনিটাইজেশন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাঁর লেখার পাশে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের জন্য রেভিনিউর অংশ পেয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন: বই পড়ে ৯ ধরনের আয়
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরিচিতি CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google