কর্মক্ষেত্রে সফট স্কিল বাড়ানোর উপায়
অভিজ্ঞতা এবং ইন্টারভিউ দেখে কর্মী নিয়োগ দেন নিয়োগদাতারা। যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তাকে বেছে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রার্থীর হার্ড ও সফট স্কিল গুরুত্বপূর্ণ, যা তাদের নিয়োগ পেতে সহায়তা করে।
সফট স্কিলের মধ্যে রয়েছে সততা, নির্ভরযোগ্যতা, কার্যকর যোগাযোগ, খোলা মন, দলীয় কাজ, সৃজনশীলতা, সমস্যার সমাধান, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, মানিয়ে নেওয়া, শেখার আগ্রহ, সহমর্মিতা ইত্যাদি। সফটি স্কিলে মূলত সামাজিক, নেতৃত্ব, যোগাযোগ, সমস্যা সমাধানসহ নানা দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ধরণের দক্ষতা ব্যক্তিত্ব-নির্ভর, যা ক্যারিয়ারের যেকোনো সময় উন্নত করা যায়। সফট স্কিল উন্নত করার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যেমন সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, পেশার উন্নয়ন ইত্যাদি। এই লেখায় আপনাদের সফট স্কিল বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানানো হচ্ছে—
সমালোচনার জন্য প্রস্তত থাকুন
কর্মস্থলে আপনি হয়ত সুপারভাইজার, ম্যানেজার এবং এমনকি সহকর্মীদের কাছ থেকে নানা ধরণের সমালোচনা শুনতে পারেন। আপনার যোগাযোগক্ষমতা, দলগত কাজের দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব এবং এমন আরও অনেক বিষয়ে তারা সমালোচনা করতে পারেন। তাদের সমালোচনাকে যদি নিজের কর্মক্ষমতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন তাহলে শিখতে পারবেন এবং সফল হতে পারবেন। সফট স্কিল উন্নয়নে অন্যতম দক্ষতা হচ্ছে- এসব সমালোচনাকে গঠনমূলক হিসেবে বিবেচনা করা। তাই ভেঙ্গে না পড়ে, তাদের সমালোচনাকে শেখার মাধ্যম হিসেবে দেখুন এবং এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সহকর্মী, সুপারভাইজার কিংবা ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।
যোগাযোগ
কার্যকর যোগাযোগ অন্যতম সফট স্কিল, যা কর্মস্থলের সবাইকে সমানভাবে উপকৃত করে। মনে করুন, অফিসে আপনার হাতে অনেক কাজ বা দায়িত্ব জমে রয়েছে এবং এজন্য আপনার অন্য কারো সহায়তার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে কিছু কাজ সহকর্মীদের কাছে ন্যস্ত করতে পারেন, যা তাদের পছন্দের। এর মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে আপনার নতুন সম্পর্ক তৈরি হবে। সফট স্কিল উন্নয়নে যোগাযোগ সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ, ইমেইল, দলগত উপস্থাপনা ইত্যাদি। তবে সব ধরণের যোগাযোগই ভিন্ন প্রকৃতির। তাই এক্ষেত্রে সফট স্কিল গুরুত্বপূর্ণ।
যোগাযোগের সময় ভাবুন, অপরকে কীভাবে সম্বোধন করছেন, আপনার বার্তা এবং কণ্ঠস্বর কতটা স্পস্ট। অপরের যোগাযোগের ধরনও বিবেচনায় রাখুন। দেখুন তারা কীভাবে যোগাযোগ করছেন, তাদের টিপস ও কৌশল দেখুন এবং তাদের স্টাইলও ফলো করতে পারেন।
দলীয় কাজে জোর দিন
যখন আপনি কোনো ভালো দলীয় কাজে যুক্ত হন, আপনি নিয়োগদাতাকে বোঝানোর চেস্টা করেন যে, আপনি অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। টিমওয়ার্ক বা দলগত কোনো কাজ হতে পারে উপস্থাপনার জন্য কাজটি কয়েকজনে ভাগ করে নেওয়া, কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করা। এই শেয়ার করা কাজের সময় কিংবা প্রাত্যহিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার বেলায় আপনি দলের সবার সবাইকে অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন এবং তাদের নিজস্ব দক্ষতার সমন্বয় ঘটাতে পারেন। আপনি যখন দলীয় কাজে জোর দেবেন, তখন আপনি শেখার জন্য নিজেকে মেলে ধরছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। এ সময় আপনি যে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখতে চাইছেন তাও ফুটে ওঠবে।
সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা
কর্মক্ষেত্রে সুন্দর সম্পর্ক তৈরির জন্য আমরা সহকর্মী ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে নানা ধরনের সফট স্কিল ব্যবহার করে থাকি। তাদের সাপ্তাহিক কাজের পরিকল্পনা, এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির সময়টা তারা কীভাবে কাটান—এ বিষয়গুলো আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের আলাপ করুন। তাদের পরিবার, শখ ও আগ্রহ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনি তাদের সঙ্গে আরও সুন্দর, আরও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। তাদের সঙ্গে পুরনো কোনো অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। তার আলোকে আবার নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুন। আপনি যদি কোনো বিভাগ বা সেকশনে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কাজ করেন, তাদের সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আসছে ছুটির দিনে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খাওয়া যায় কিনা। মাস শেষে কোনো দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ানো যায় কিনা।
অফিস থেকে বের হয়ে সহকর্মী বা সুপারভাইজারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করা বেশ কার্যকর। এতে আপনি পেশাগতভাবেও তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন কারণ আপনি তাদের ব্যক্তিগতভাবেও কিছুটা বেশিই জানতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন কীভাবে এ বিষয়গুলো কর্মস্থলে প্রভাব ফেলে।
কমফোর্ট জোন বা নিজস্ব গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসুন
নতুন কিছু শেখার জন্য আমাদের কমফোর্ট জোন বা নিজস্ব গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসা ভীষণ জরুরি। এতে কিছুটা অস্বস্তিবোধ হতে পারে এবং অস্বস্তি থেকে আসতে পারে হতাশা। তবে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারলে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও তা আরামদায়ক ও আনন্দদায়ক হয়। আমরা যখনই কোনোকিছুতে উন্নতি করতে চাই, নিজস্ব গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসা উচিত এবং নতুন কিছু শুরু করা উচিত। এটা হতে পারে, অফিসের নতুন ডেকোরেশন, নতুন দায়িত্ব বন্টন কিংবা নেতৃত্বদান। কোনো প্রজেক্ট বা প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য আপনি নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারেন। এই সুযোগে জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়ার চর্চা উন্নত করতে পারেন। কোনো অপ্রস্তুত পরিবেশে (হঠাৎ উদ্ভূত কোনো কাজ) নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। এতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে, আপনি কাজটির বিষয়ে যত্নশীল এবং আপনার মধ্যে নতুন কিছু শেখার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।
শেখার জন্য প্রস্তত থাকুন
আপনি যেকোনো সফট স্কিল উন্নত করতে চাচ্ছেন—এর অর্থ এই যে, আপনি সফল হতে পারেন, কোনো বিপত্তির সম্মুখিন হতে পারেন, এমনকি ব্যর্থও হতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কথা, আপনি কিছু শিখতে পারছেন। যেমন, আপনাকে কোনো প্রকল্পের প্রধান করা হয়েছে। এবার আপনি সফট স্কিল দিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে এবং দলের মধ্যে সমন্বয় করছেন। এক পর্যায়ে প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও আপনি জানতে চাইবেন, কোথাও কোনো ত্রুটি ছিল কিনা। পরবর্তী সময়ে নতুন প্রকল্প কীভাবে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায় তার উপায় জানতে চাইবেন।
পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিন
সফট স্কিলের উন্নয়নে অন্যতম ধাপ হচ্ছে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কর্মক্ষেত্রে উত্থান-পতন থাকে। অফিস স্টাফ থেকে শুরু করে কর্মস্থলের নানা প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে খাপ খাইয়ে নেওয়া বিশেষ গুরুত্বের। মানিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল, যাতে নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে বা উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে বিকল্প সমাধান বের করা যায়। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ থাকতে হবে। জানতে হবে এর ব্যবহার। অফিসের প্রয়োজনে কখন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে সে সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা রাখতে পারলে নিশ্চিত কর্তৃপক্ষের সু-নজরে থাকবেন।
অন্যকে পর্যবেক্ষণ করুন
সফট স্কিল উন্নত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে—আপনার আশপাশের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা। এর মানে, আপনি ব্যবস্থাপক, সহকর্মী ও নিয়োগদাতাদের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। ভালো করে দেখুন, তারা কোনভাবে কাজ করেন, তারা কীভাবে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের একক কাজের ধরণ বোঝার চেস্টা করুন। অন্যের কাছ থেকে শেখার জন্য মুখিয়ে থাকুন। কেননা সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে হার্ড ও সফট স্কিল নিয়ে একই পরিবেশে কাজ করছেন।
সঠিক সময়ে কাজ করুন
কর্মক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনা নিরেট বা খাঁটি সফট স্কিল। সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা, যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করা সফট স্কিলের মধ্যে পড়ে। অফিসের কোনো কাজে বা সহকর্মীকে প্রতিশ্রুত সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা উচিত। এতে আপনিও সফল হিসেবে সুনাম কুড়াবেন। কর্মীদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা, কোম্পানির খরচ কমানো, প্রশিক্ষণের সময় কমিয়ে আনা ইত্যাদিতে সহায়তা করে সময়ানুবর্তিতা। কাজেই এই স্কিল আপনার মধ্যে থাকাও জরুরি।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google