শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই
শিক্ষার্থীদের
অ্যাকাডেমিক বই পড়তেই হবে। এর বাইরে ফিকশন, নন-ফিকশন কেন পড়া উচিত, তা নিয়ে আমাদের
দেশে হয়ত দ্বিধা রয়েছে। কেননা পাঠক তো হারিয়ে যাচ্ছে, স্ক্রিনের দর্শকের তুলনায়।
তবু ভেবে দেখুন, বিশ্বে শীর্ষ ধনীরা এই ইন্টারনেটের যুগেও নিয়মিত বই পড়েন।
ইলন মাস্ক, বিল
গেটস কিংবা ওয়ারেন বাফেট—এই শীর্ষ ধনীরা প্রতিদিন বই না পড়ে থাকতে পারেন না।
অর্থাৎ ধনী হওয়ার সঙ্গে বই পড়ারে যোগসূত্র আছে বৈকি! তাই চটজলদি দেখে নিন কোন ১০টি
বই প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা পড়া উচিত।
মাইন্ডসেট: দ্য নিউ সাইকোলজি অব সাকসেস
ক্যারল ডিউইক
১০ লাখ কপি
মুদ্রিত হয়েছে
এই বইয়ে
ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে জন্ম থেকে যে কমন আইডিয়া (সাধারণ ধারনা) রয়েছে তা জানতে
সাহায্য করবে। ডিউইকের মতে, সবার মধ্যে উন্নতি করার সামর্থ্য রয়েছে, নতুন দক্ষতা
অর্জনের যোগ্যতা রয়েছে—এসব গুণাবলী আমাদের মনোভাব এবং মানসিক গঠনে সহায়তা করে যাতে
আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারি। বইটিতে লেখক সাফল্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
বদলে দিয়েছেন। মানুষের অন্তর্নিহিত সক্ষমতা ও সাফল্যকে মানুষ কীভাবে দেখে তার
মনস্তাত্বিক বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিয়েছে ক্যারল ডিউইক। ফলে শিক্ষার্থীরা বইটি পড়ে
উপকৃত হবেন।
দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি এফেকটিভ পিপল
স্টিফেন কোভে
আড়াই কোটির বেশি
কপি বিক্রি হয়েছে
সুপরিচিত এই
বইটি পড়লে সন্তোষজনক ও সফল জীবনের দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। কোভে বইয়ে সাতটি বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসের কথা বলেছেন, যাতে আত্মউন্নয়ন এবং অধিক কার্যকর উপায়ে সফল
হওয়ার মন্ত্রণা রয়েছে। কোভের সবচেয়ে জনপ্রিয় বই এটি। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি
মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছেন। বইটি পড়ে একজন শিক্ষার্থী জীবনে ইতিবাচক
রূপান্তর ঘটাতে পারবেন। তারা হতাশা, দুর্দশা শনাক্ত ও সংশোধন করতে পারবেন।
ভালোমন্দের মানদণ্ড জেনে জীবনের সব সমস্যাকে সততার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন।
থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ
নেপোলিয়ন হিল
দেড় কোটির বেশি
কপি বিক্রি হয়েছে
যেসব ব্যক্তি
আর্থিক ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তাদের জন্য এই বই। হিল পাঁচশোর বেশি
বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা এতে উল্লেখ করেছেন, যাঁরা নিজেদের কৌশল অবলম্বন করে
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ধনী হয়েছেন। এতে তিনি ধনীদের সাফল্য অর্জনের কিছু সূত্র
বাতলে দিয়েছেন, যা প্রত্যেক শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেনির মানুষ নিজেদের জীবনে প্রয়োগ
করতে পারেন। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। এটি সর্বকালের সেরা ১০টি আত্মউন্নয়নমূলক
বইয়ের তালিকায় রয়েছে।
হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল
ডেল কার্নেগি
পরবর্তী
প্রজন্মের নেতাদের জন্য হালনাগাদ করা হয়েছে
ব্যক্তিগত দৃঢ়
বিশ্বাস আঁঁকড়ে ধরে কিভাবে সম্পর্কোন্নয়ন করা যায় এবং লক্ষ্য অর্জন করা যায় তা এই
বইয়ের মূল বিষয়। মানসিক বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে এই বই। নতুনভাবে
চিন্তাভাবনা করতে শেখায় এবং নতুন উচ্চাকাক্ষার পথ দেখায়। বইটি পড়ে শিক্ষার্থীর
দ্রুত ও সহজে বন্ধু বানাতে পারবেন, জনপ্রিয় হতে পারবেন, ভালো বক্তা হতে পারবেন।
এমনকি প্রভাব ও প্রতিপত্তি অর্জন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। বইটি ১৯৩৬ সালে
প্রকাশিত হলেও, কার্নেগির এসব নীতিমালা আজও বিশ্বের সব দেশে প্রাসঙ্গিক।
আউটলাইয়ারস: দ্য স্টোরি অব সাকসেস
ম্যালকম
গ্ল্যাডওয়েল
সাফল্য অর্জনের
জন্য মুখ্য উপাদনগুলো এই বইয়ের মূল উপজীব্য। যেমন সংস্কৃতি, সুযোগ, ভাগ্য ইত্যাদি
বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন গ্লাডওয়েল। লেখকের মতে, সাফল্য শুধু ব্যক্তিবিশেষের
পরিকল্পনা, প্রতিভা ও চেষ্টায় উদ্ভাসিত হয়না। বরং এজন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক
স্থান-কাল-পাত্র। অর্থাৎ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিও সাফল্য অর্জনে সমানভাবে প্রযোজ্য বলে
দাবি লেখকের। যেমন সুযোগ, দূরদর্শিতা, মা-বাবার সহায়তা ইত্যাদি। বইটিতে বিটলস, বিল
গেটস ইত্যাদি দল ও মানুষের সাফল্যে গল্পকে স্থান দিয়েছেন গ্ল্যাডওয়েল।
দ্য হাপিনেস প্রজেক্ট
গ্রেটচেন রুবিন
নিউ ইয়র্ক
টাইমসের সর্বাধিক বিক্রিত বই
১০ লাখের বেশি
বই বিক্রি হয়েছে
এই বইয়ে রুবিনের
সাফল্য লাভের গোপন মন্ত্রের এক বছরের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে
লেখিকা নানা কৌশল এবং অভ্যাস ঝালিয়ে দেখেছেন, এবং নিজের আবিস্কারগুলো নথিবদ্ধ
করেছেন। দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট বইটি আনন্দদায়ক এবং সন্তোষজনক জীবন গড়ার অনন্য
গাইডলাইন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত লেখক এক সময় উপলদ্ধি করেন, তার
জীবনে সুখী হওয়ার অনেক উপায় রয়েছে, তবে তা সবসময় তাকে খুশি করে না। তাই তিনি
জীবনধারণ পরিবর্তন না করে চিন্তাভাবনা বদলানো শুরু করেন। তার ভাষ্যে, আমি জীবন
পরিবর্তন না করে জীবনের পরিবর্তন চেয়েছিলাম। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিজেকে
নিয়ে এক বছর গবেষণা করে দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট বইটি লেখেন।
কোয়াইট: দ্য পাওয়ার অব ইন্ট্রোভার্টস ইন এ ওয়ার্ল্ড
দ্যাট ক্যান্ট স্টপ টকিং
সুসান কেইন
নিউ ইয়র্ক
টাইমসের সর্বাধিক বিক্রিত বই
একজন
ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী ব্যক্তি কী কী ইতিবাচক ধারণা এবং সমস্যার সম্মুখীন হন
তা এই বইয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কেইনের মতে, আমাদের সমাজ প্রায়ই পুরোপুরি
অন্তর্মুখী স্বভাবের ব্যক্তিদের বুঝতে পারে না এবং তাদের তারিফ বা প্রশংসা করতে
জানে না। লেখিকার ভাষ্য, বইটি লেখার জন্য ২০০৫ সাল থেকে কাজ শুরু করি (প্রকাশিত হয়
২০১২ সালে)। প্রকাশিত হওয়ার আগে কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলি, ইমেইল
আদান-প্রদান করি। একই সময়ের মধ্যে অনেক বই, গবেষণা পত্র, ম্যাগাজিনের প্রবন্ধ,
অনলাইনে চ্যাট করি, যাতে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এই স্বভাবের তাদের জন্য মাস্ট রিড বই কোয়াইট।
অ্যাটমিক হ্যাবিটস: টাইনি চেঞ্জেস, রিমার্কেবল রেজাল্টস
জেমস ক্লিয়ার
নিউ ইয়র্ক
টাইমসের সর্বাধিক বিক্রিত বই
দেড় কোটির বেশি
কপি বিক্রি হয়েছে
নামটি দিয়ে বইটি
চেনা যায়—সহজে ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা এবং খারাপ অভ্যাস দূর করে সফল হওয়ার নানা
পদ্ধতি রয়েছে বইটিতে। এই বই পড়ে সু-অভ্যাস গড়ে তোলার উপায় সম্পর্কে জানা যাবে এবং
কু-ধারণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ক্লিয়ার দেখিয়েছেন- কীভাবে অভ্যাস কাজ করে এবং
বাস্তবমুখী উপদেশ দেয়, যাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আসে। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে তাই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বইটি। আসলে উন্নত অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য লেখক নিজের
অভিজ্ঞতা এই বইয়ে তুলে ধরেছেন।
দ্য ফোর-আওয়ার ওয়ার্ক উইক
টিম ফেরিস
নিউ ইয়র্ক
টাইমসের সর্বাধিক বিক্রিত বই
এই বইটি পড়লে
প্রচলিত ৯-৫টা রুটিন থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় তা লেখক তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে
জীবনে সন্তুষ্টি লাভের উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে। ফেরিস দেখিয়েছেন, কাজের ক্ষেত্রে
সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত না থেকে কীভাবে নিজের কাজগুলো স্বয়ংক্রিয় উপায়ে সেরে ফেলা
যায়, কীভাবে অন্যদের কাজে লাগানো যায় এবং পণ্য ও সেবার কাটতি বাড়িয়ে অধিক অর্থ
উপার্জন করা যায়। মূলত ইঁদুর দৌড় ত্যাগ করার মন্ত্রণা দেয় এই বইটি। কম কাজ করে
বেশি আয়ের পথ জানতে শিক্ষার্থীসহ সবাই বইটি পড়তে পারেন।
লিন ইন
শেরিল
স্যান্ডবার্গ
যুক্তরাষ্ট্রে
সর্বাধিক বিক্রিত বই
বইটি মূলত
নারীদের জন্য লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সাবেক প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা (সিইও) শেরিল স্যান্ডবার্গ। নারীরা কীভাবে ক্যারিয়ারে সফল হতে পারেন, তা
এই বইয়ের মূল বিষয়। স্যান্ডবার্গ নারীদের সাফল্য অর্জনে ঝুঁকি নেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব
দিয়েছেন। ছাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি। লেখিকা খ্যাতনামা টেড টকের এক
অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নারীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ক্যারিয়ার থেকে নিজেদের গুটিয়ে
নেন। তার সেই স্পিচ ১১০ কোটির বেশিবার দেখা হয়েছে। তার সেই কথাগুলোর পাশাপাশি
নারীদের ক্যারিয়ার গঠনে চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি, লক্ষ্য অর্জন লিন ইনে লিখেছেন
স্যান্ডবার্গ।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google