জার্মানিতে স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা নেয়ার উপায়
BY
Nadim Majid
জার্মানি। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে পুরো ইউরোপকে পরিচালনা করছে এ দেশ। উচ্চশিক্ষা নিয়ে এ দেশের প্রতি আগ্রহ রয়েছে আমাদের অনেকের-ই। সে দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন জার্মানির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ড. মাসুদ কবির। তার সাথে কথা বলে জার্মানিতে স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা নিয়ে লিখেছেন নাদিম মজিদ
যারা জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাদের
জানা আছে স্কলারশিপ/ফান্ডিং ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে দীর্ঘ ওয়েটিং
পিরিয়ডের কথা। এই দীর্ঘ ওয়েটিং পিরিয়ড কমানোর জন্যে অনেকে
বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন বা নেয়ার চেষ্টা
করেন। না বুঝে কাজ করার কারণে কোনো কোনো উদ্যোগ উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কি কি ফ্রি উপায়ে জার্মানি আসা যায়:
আমরা জানি যে, জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসাতে আসার সময় যদি কোনো ফান্ডিং থাকে, তা হলে জার্মান এম্বেসী তাদের ভিসা ফাস্ট-ট্রেক করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে
(সচরাচর ২-৮ সপ্তাহ) দিয়ে দেয়। এখানে
পয়েন্ট হচ্ছে দুটো: এক নম্বর হলো একটি ফান্ডিং, আরেকটি হলো
ভিসা পাবার জন্যে ওয়েটিং পিরিয়ড। কেউ ফান্ডিং পেলে খুব দ্রুত ভিসা হয়ে যায়
জার্মানিতে। জার্মানিতে আসার জন্যে অনেকেই জার্মানির ব্যাংক এ ব্লক করে যে টাকা
(প্রায় ১৩.৫ লক্ষ) , সেটা ম্যানেজ করতে পারেন না। তাদের
জন্যে এই ফ্রি অফ কস্ট এ আসার উপায়গুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জার্মানিতে টাকা ছাড়া আসার উপায়গুলিকে
আমি কয়েকটা ভাগে ভাগ করলাম:
১. Ausbildung:
Ausbildung মানে হলো আপনি কোনো বিষয়ের উপর কাজ
করবেন এবং সাথে সাথে কিছু থিওরীও শিখবেন। এই ক্ষেত্রে যে কোম্পানিতে আপনি Ausbildung করবেন, ওই কোম্পানি আপনাকে মাসে মোটামুটি ৭৫০
ইউরো থেকে ১১০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন দিবে। এই বেতন বা ফান্ডিংটা আপনি পেলে মোটামুটি
আপনার জার্মানিতে আসার জন্যে খুব বেশি টাকা ব্যাংকে রাখতে হবে না। ধরুন, আপনি ৮০০ ইউরো আপনার বেতন পেলেন Ausbildung এ। তা হলে আপনাকে বাকি প্রায় ১৩৪ ইউরো মাসিক হিসেবে ১ বছরে ১৬০০ ইউরো ব্যাংকে
রাখতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার প্রধান যোগ্যতাগুলি হলো: কম পক্ষে ১০ বছরের
পড়াশুনা,
জার্মান ভাষার B১ (B২ হলে বেটার) সার্টিফিকেট। আপনার জার্মান ভাষার সার্টিফিকেট থাকলে জার্মান
কোম্পানিগুলিতে আবেদন করে Ausbildung পেতে পারেন। Ausbildung পেলে ওটার কন্ট্রাক্ট
সহ এম্বেসীতে ভিসা এর জন্যে এপলাই করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভিসা ইন্টারভিউ
পাবেন।
সোর্স:
https://life-in-germany.de/ausbildung-fur-auslander-nicht-eu/
২. ডুয়াল স্টাডি:
ডুয়াল স্টাডি হলো একটি পড়াশুনার পদ্ধতি
যেখানে অর্ধেক সময় কোম্পানিতে কাজ করবেন, আর অর্ধেক সময়
ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করবেন। এই ডুয়াল স্টাডি ব্যাচেলর'স বা মাস্টার'স হতে পারে। ডুয়াল স্টাডিতেও আপনাকে কোম্পানি থেকে বেতন দেয়া হয়। এটা প্রায়
৭৫০ থেকে ১৫০০ ইউরো হতে পারে মাসে। এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ যেখানে পড়াও যায়, আবার টাকাও পাওয়া যায়। ডুয়াল স্টাডি বেশিরভাগ জার্মান ভাষায় হয়। তবে ইংলিশ
দিয়েও কোথাও কোথাও ডুয়াল স্টাডিতে পোড়ানো হয়। এখানে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, পড়াশোনাকালীন চাকরি আপনার নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াচ্ছে। আর পাস
করার পর জব পাবার ক্ষেত্রে বিরাট সুবিধা পাবেন। আর কেউ যদি
এভাবে বেতনসহ ডুয়াল স্টুডিতে চান্স পায় তা হলে তিনি খুব
দ্রুত জার্মান ভিসা ইন্টারভিউ পাবেন। এবং তার নিজের টাকাও প্রায় লাগবে না।
সোর্স:
https://www.wegweiser-duales-studium.de/gehalt/infos/
৩. স্কলারশিপ:
জার্মানিতে অনেক ধরণের স্কলারশিপ
আছে। যার কিছু অংশ DAAD ওয়েবসাইট এ দেয়া আছে। কিন্তু DAAD ওয়েবসাইটের বাইরেও অনেক স্কলারশিপ আছে।
সাধারণত জার্মানিতে ২০০ ইউরো থেকে ২০০০ ইউরো পর্যন্ত স্কলারশিপ পেতে পারে কেউ।
কারো স্কলারশিপ হলে তিনি জার্মান ভিসা ইন্টারভিউ কল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পেতে
পারবেন।
৪. ইন্টার্নশীপ:
অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে ইন্টার্নশীপ নিয়ে আসেন। মাস্টার'স বা ব্যাচেলর'স এ পড়াকালীন সময়ে যদি কেউ
জার্মানিতে ইন্টার্নশীপ নিয়ে আসেন, তা হলে তিনি
এখানে থেকেই রেসিডেন্সির সময় বাড়িয়ে পরবর্তী পড়াশোনা সরাসরি শুরু করতে পারবেন। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা কেন জানি ইন্টার্নশীপ
এর ব্যাপারটি খুব একটা জানেন না, যেখানে পৃথিনীর অনেক দেশের
ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত জার্মানি আসছেন ইন্টার্নশীপ নিয়ে।
এ বিষয়ে জার্মান সরকারের দেয়া নিচের লিংকটি দেখতে পারেন।
লিংক:
শর্ত সমূহ:
১. এমন কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হবে যেটা জার্মান সংস্থা আনাবিন (Anabin) এ স্বীকৃত।
২. এমন কোনো স্টাডি করছেন যেটা জার্মান
সমতুল্য (যেমন ৪ বছরের ব্যাচেলর'স বা মাস্টার'স)।
৩. ব্যাচেলর'স এ কমপক্ষে ৪ সেমিস্টার শেষ করেছেন।
আনাবিন ওয়েবসাইট এ "suchen" অপসন এ গিয়ে "Bangladesh" লিখে "Suche
Starten" এ প্রেস করে দেখতে পারবেন আপনার
ইউনিভার্সিটি এই লিস্ট এ আছে কিনা।
লিংক: https://anabin.kmk.org/no_cache/filter/institutionen.html
জার্মানিতে এক বছর পর্যন্ত ইন্টার্নশীপ
করা যেতে পারে।
কিভাবে কি করতে হবে:
১. জব বা কোম্পানি ওয়েবসাইট থেকে একটা
ইন্টার্নশীপ খুঁজে এপলাই করা।
২. ইন্টারভিউয়ের পর সিলেক্টেড হলে Arbeitsamt এ কন্ট্রাক্ট সহ এপলাই করা।
৩. আবেদন
করার পর সেই অনুমতিসহ এম্বেসীতে ভিসার জন্যে দাঁড়ানো।
কোথায়, কিভাবে এপলাই করতে হয়:
পারমিশন এর জন্যে Arbeitsamt এ এপলাই করার
ওয়েবসাইট:
https://www.arbeitsagentur.de/unternehmen/arbeitskraefte/fachkraefte-ausland/praktika-auslaendische-studierende/praktika-auslaendische-studierende-upload
কি কি লাগবে:
১. ওয়েবসাইটে দেয়া এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ।
২. দেশের যে ইউনিভার্সিটি পড়া লিখা
করছেন,
ওখান থেকে একটা ফর্ম পূরণ করা যেটা Arbeitsamt এর ওয়েবসাইট এ দেয়া আছে।
৩.ইউনিভার্সিটিতে
পড়ার প্রমাণ।
৪. একটা ইন্টার্নশীপ প্ল্যান যেটা কিনা Arbeitsamt থেকে দেয়া একটা ফর্ম এ থাকবে।
৫. পাসপোর্ট এর কপি।
৬. এগ্রিমেন্ট ঘোষণার একটা ফর্ম।
৭. আনাবিন ওয়েবসাইট এ দেয়া উনিভার্সিটির
নামের স্ক্রিনশট এর কপি
সোর্স:
https://www.arbeitsagentur.de/unternehmen/arbeitskraefte/fachkraefte-ausland/praktika-auslaendische-studierende/praktika-auslaendische-studierende-upload
নিচের ওয়েবসাইট গুলিতে অনেক ইন্টার্নশিপের এড দেখতে পাবেন:
https://www.stepstone.de/jobs/praktikum-softwareentwicklung
https://www.jobvector.de/stellensuche
ইন্টার্নশীপে বেতন দেয়া হয় ৯০০ ইউরো থেকে ২০০০ ইউরো। কাজেই এই ক্ষেত্রেও আপনার নিজের
টাকা খুব একটা লাগবে না জার্মানি যাবার জন্যে। জার্মানিতে স্কিল মানুষের অভাব
থাকায় ইন্টার্নশীপ পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google