Home পরামর্শ

পানিশূন্যতা থেকে বাঁচুন

পানিশূন্যতা থেকে বাঁচুন

6 Min read

Friday, June 9th 2023



দেশে একদিকে যেমন পড়ছে প্রচণ্ড খরা, তার সাথে যুক্ত হয়েছে অতিমাত্রায় লোডশেডিং। ছকবাঁধা সময়ের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করা কিংবা হাতের কাজ শেষ করা হয়ে গেছে দুরূহ। এ সময়ে খেয়াল না করলে বিপদ বাড়াতে পারে ডিহাইড্রেশন। ডিহাইড্রেশনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন নাদিম মজিদ

 

শরীরে পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ডিহাইড্রেশন। আমাদের দেহের ৭০ শতাংশের বেশি অংশজুড়ে রয়েছে মূলত পানি বা তরল। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ শারীরিক চক্র সচল রাখার জন্য তরল উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। শরীর থেকে বিভিন্ন উপায়ে পানি বা তরল নিঃসরণ হয়ে থাকে। ঘাম, মূত্র ও মলের মাধ্যমে ছাড়াও শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে কিংবা ত্বক হতে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তরল নিঃসরিত হচ্ছে। গরমের দিনে শেষোক্ত প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ ঘাম, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ত্বক হতে সরাসরি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তরল নিঃসরণের মাত্রাটা বেশি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, গরমে পানিশূন্যতার মূল কারণ ঘেমে যাওয়া। আমরা যতটুকু ঘামি, তার তুলনায় সাধারণত কম পানি পান করি। গরমের সময়ে অনেকেরই বেশ অনেকটা সময় বাইরে রোদে থাকতে হয়। তখন অতিরিক্ত ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হতে পারে।

 

অতিরিক্ত গরম,  ঘামা ছাড়াও ডিহাইড্রেশনের আরও কিছু কারণ আছে, যেসব কারণেও ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে। তা হলো-


১. পানির অভাব বা অন্য কোনো কারণে অপর্যাপ্ত পানি পান করা বা পানি পান করতে না পারা।

২. ডায়রিয়া, কলেরা

৩. অতিরিক্ত বমি হওয়া

৪. যেকোনো শারীরিক পরিশ্রম বা খেলাধুলাজনিত অতিরিক্ত ঘাম।

৫. ডায়াবেটিস বা ওষুধ গ্রহণের কারণে অতিরিক্ত মূত্রত্যাগ।

 

ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ:

 

১. অতিরিক্ত পিপাসা লাগা।

২. মুখ-গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং জিব ভারী হয়ে ফুলে ওঠা।

৩. শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।

৪. মাথা ঘোরানো।

৫. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়া।

৬. বুক ধড়ফড় করা।

৭. প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।

৮. প্রসাবের রং হলুদ বা গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করা।

৯. বিভ্রান্তি বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ মানসিক আচরণ করা।

১০. খিঁচুনি কিংবা জ্ঞান হারানো

১১. অবসাদ ভর করা।

১২. হঠাৎ চোখের সামনে ঘোলা দেখা বা মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা।

১৩. মাংশপেশির দুর্বলতা।

১৪.কোষ্ঠকাঠিন্য।

 

পানিস্বল্পতা দূর করার ঘরোয়া উপায়:

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিহাইড্রেশনের চিকিৎসা বাড়িতেই নেওয়া যায়। বাড়িতে এর ব্যবস্থা নেওয়া খুবই সহজ। আসুন জেনে নিই ঘরোয়াভাবে ডিহাইড্রেশন দূর করার উপায়-

* বিশুদ্ধ পানি: যদি শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেখা দেয় বা পানিস্বল্পতার লক্ষণ প্রকাশ পায়, তবে  নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করা উচিত। এতে ডিহাইড্রেশন দূর হবে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে যেহেতু শরীর থেকে পানি দ্রুত বের হয়ে যায়, তাই এ সময় একটু বেশি পান করাই ভালো। এ কারণে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে। আপনার শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক আছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রস্রাবের রং কেমন আছে, তা দেখা। যদি প্রস্রাব হলুদাভ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে।

* ডাবের পানি: ডিহাইড্রেশন দূর করতে ডাবের পানি বেশ উপকারী। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের মিনারেলের ঘাটতিও দ্রুত মেটায়। খুব দ্রুত ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে।

* লেবুর শরবত: প্রচণ্ড গরমে লেবুপানি খুব উপকারী এক পানীয়। লেবুপানি শরীরের পানির ঘাটতি ও শরীর থেকে চলে যাওয়া মিনারেলের ঘাটতিও মেটায়। এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবু চিপে তাতে মধু মিশিয়ে পান করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

* ওরস্যালাইন: ডিহাইড্রেশন দূর করতে ওরস্যালাইনও ভালো ভূমিকা রাখে।

* গ্লুকোজ: গ্লুকোজ ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। গ্লুকোজ পানিতে গুলিয়ে খেলে পানির চাহিদার পাশাপাশি দ্রুত শক্তি ফেরাতেও সাহায্য করে।

 

তবে এসব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও রোগীর  অবস্থা বেগতিক হলে বা অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে আর অপেক্ষা বা সময়ক্ষেপণ না করে  রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

 

ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে করণীয়:

 

ডিহাইড্রেশন হেলাফেলা করার মতো কোনো ব্যাপার নয়। তাই ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে আমাদের সব সময় সচেতন থাকা উচিত। কিছু নিয়ম মেনে চললে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ডিহাইড্রেশন থেকে বেঁচে থাকার কিছু উপায় নিচে বর্ণনা করা হলো-

  

১. বাইরে বের হওয়ার সময় পানির বোতল সব সময় সাথে রাখতে হবে। যত বেশি ঘাম হবে, তত বেশি পানি পান করুন।

২. তাপমাত্রা বেশি থাকলে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।

৩. বাইরে বের হওয়ার সময় হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।

৪. একটানা বেশি সময় উষ্ণ এলাকায় থাকবেন না। মাঝেমধ্যে ছায়ায় কিংবা ফ্যান বা এসির নিচে অবস্থান করুন।

৫. গরমের সময় নিয়মিত সরস ফল বা ফলের রস খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৬. ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলেই খাওযার স্যালাইন এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

৭. শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করতে হবে। দ্রুত এসি বা ফ্যানের নিচে অবস্থান নেওয়া উত্তম।

৮. শরীরে ঠান্ডা পানির ছিটা দেওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে শরীরে একটু ভেজা তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখলে ভালো হয়।





POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট