Home পরামর্শ

প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা হলেও বই পড়ুন

প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা হলেও বই পড়ুন

8 min read

Saturday, August 5th 2023



শব্দ জ্ঞান বৃদ্ধি করে—প্রবাদে তাই বলে। শব্দ জমাটবদ্ধ যেথায় থাকে সেটি বই, যা কাগজে বা অন্তজার্লে লিপিবদ্ধ থাকতে পারে। বই অগোচরেই অজানাকে শেখায়, জানায় নতুন কিছু। বই পড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে আরও বেশি দিন বাঁচতে সহায়তা করে। বই পড়ার অভ্যাস মেধা—মনন, স্মৃতিশক্তি, যোগাযোগ দক্ষতা উন্নতিসহ সৃজনশীলতায় পরিশীলিত ও মানবীয় গুণে গড়ে ওঠতে ভূমিকা রাখে।


নেদারল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য সবার চাইতে বইপড়ুয়ারা গল্প ও কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে সহজেই ‘ইমোশনালি ট্রান্সপোর্টেড’ (আবেগ দ্বারা প্রভাবিত) হয়ে থাকেন। যা সহমর্মিতা বাড়ায়। অন্যের অবস্থা ও সুখ—দুঃখকে অনুধাবন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বই জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ হতে, বিশ্বকে হাতের মুঠোয় থেকে জানতে, মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। বই মানুষকে যেমন প্রেরণা দেয় তেমনি পুনরায় বাঁচার রসদও যোগাতে সহায়তা করে।



বই কেন পড়বেন


ই.পি. হুইপল বলেছিলেন, ‘'বই হচ্ছে সময়ের মহাসমুদ্রে নির্মিত বাতিঘর।’ এটি জ্ঞানের মহাসমুদ্র কিংবা বাতিঘর। বই পড়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। যেমন:


* বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করা যায়।

* মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়।

* ফোকাসের (লক্ষ্যে বা উদ্দেশ্য) উন্নতি হয়।

* স্মৃতিশক্তি উন্নতি হয়।

* বিনোদন উপভোগ করা যায়।

* সহানুভূতি ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

* নিজের চিন্তা চেতনার উন্নতি বাড়ে।

* যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

* মানসিক চাপ কমে।

* কল্পনাকে আলোকিত করে।

* চারপাশ সহ বিশ্ব সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সহায়তা করে।

* আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

* শব্দভাণ্ডার বাড়ায়।

* নতুন ভাষা শিখতে সাহায্য করে।

* বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা জাগিয়ে তোলে।

* বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ণ করে তোলে।

* লেখার দক্ষতা বাড়ায়।

* আত্ম-উন্নতিতে সাহায্য করে।

* ইতিহাস জানায় এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়।



পাঠ্যাভ্যাস বাড়ানোর উপায়


ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘আসুন আমরা পড়ি এবং নাচতে দিই— দুটি বিনোদন কখনও বিশ্বের কোনো ক্ষতি করবে না।’ নানান কারণে বইয়ের প্রতি অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার। কিন্তু আলোকিত পরিবার, সমাজ, দেশ পেতে প্রয়োজন পাঠ্যাভাস। সেজন্য সন্তানকে বই কিনে দিতে বইয়ের দোকান, লাইব্রেরী, পাঠাগার, বইমেলাতে নিয়ে যেতে পারেন। নিয়মিত বই কিনতে ন্যূনতম একটি বাজেট রাখুন। বিদ্যাপীঠে শ্রেণিভিত্তিক বইপড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট একটু সময় সন্তানের সঙ্গে একসঙ্গে বই পড়ে অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে।


কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল বলেন, ‘ডিজিলাইশনের যুগেও বই পড়ার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। যেখানে বাচ্চারাও হেসেখেলে মজার ছলে দেখতে, বলতে এবং শিখতে পারছে। বাচ্চাদেরকে সেদিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে, চাহিদা বাড়াতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকে। মা—বাবারা যদি মোবাইলে, হিন্দি সিরিয়ালে (টিভি) বসে থাকে তাহলে বই পড়ার অভ্যাসের চাহিদা, আগ্রহ এবং উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে না। সেজন্য ঘরের ভেতরে বই পড়ার পরিবেশ, কালচার (সংস্কৃতি) শুরু করতে হবে। পাড়া—মহল্লায় নয়, এখন ঘরে ঘরে লাইব্রেরি (পাঠাগার) গড়ে তুলতে হবে।’


‘এখন আমাদের পাড়া—মহল্লায়, অলি—গলিতে বড় বড় মাঠ নেই, বিভিন্ন ধরনের ক্লাব ও সংগঠন নেই, সুস্থধারার নাটক, যাত্রা, গানবাজনার অনুষ্ঠান নেই। কিন্তু এতোকিছু নাই এর মধ্যেও খুঁজে নিয়ে শেখার, জানার সুযোগ করে দিতে হবে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গান শোনা, বেড়াতে (ভ্রমণ) নিয়ে যাওয়াসহ কমিনিকেশন বাড়াতে হবে।’ যোগ করেন কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল।



আরও যেসব উপায়ে গড়ে তুলতে পারেন পাঠ্যাভাস-


* বই পড়ার পাশাপাশি বইটি সম্পর্কে কথা বলুন, তথা বইয়ের রিভিউ দিন।

* বিভিন্ন বইয়ের সংগ্রহ সহ বাড়িতে একটি শান্ত পড়ার জায়গা তৈরি করুন।

* আশেপাশের পাঠাগার (লাইব্রেরি) পরিদর্শন করুন।

* যে বয়সীর হোক, যা বা যে ধরনের বই পড়তে চায় তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন।

* হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোন থেকে বিরতি নিয়ে বই পড়ার সময় বের করুন।

* একই ধরনের বই সবসময় বা একাধারে না পড়ে, সময়ে সময়ে বইয়ের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করুন।

* বিভিন্ন উপায় বেছে নিতে চেষ্টা করুন (যেমন- ইবুক, ভিডিয়ো এবং অডিওবুক)।

* যে ধরনের বই পড়ে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন না, সেগুলো থেকে বিরতি নিন।

* একটি পঠন তালিকা তৈরি করুন।

* বই পড়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন।

* পড়ার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন।

* নিয়মিত এবং সক্রিয়ভাবে পড়ে যান।

* বাসা-বাড়িতে নিয়মিত পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন রাখুন।

* যেখানেই যান না কেন একটি বই সাথে রাখুন।

* বিরক্ত বা মনোযোগি হতে না পারলে, প্রয়োজনে পড়ার একজন সঙ্গি (পার্টনার) খুঁজে নিন।

* টেলিভিশন বা ইন্টারনেট কমিয়ে দিন।




হার্ড বা প্রিন্টেট বইয়ের বিকল্প ইবুক


ই—বুক ও মুদ্রিত বইয়ের মধ্যে বির্তক থাকলেও বলা যায়, এটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একই পণ্যের দুটি ভিন্ন রূপ। ই—বুক হল ডিজিটাল ফরম্যাটের একটি মাধ্যম। যে মাধ্যমে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে বই পাঠ করা যায়। যেকোন আধুনিক ডিভাইসে এটি ডাউনলোড করা যায় এবং পড়া যায়। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডাউনলোড করা যেতে পারে। পড়তেও সহজ। এটাও ঠিক একটা মুদ্রিত বই। মুদ্রিত বইটি হাতে নিয়ে পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে পড়া যায়, ঘ্রাণ নেওয়া যায়। অন্যদিকে ই—বুক হল সেই মুদ্রিত বইটিই ডিভাইসের স্ক্রিনে টাচ্ করে পড়তে হয়। ই—বুকের লিংকে ক্লিক করলেই ডাউনলোড সিস্টেম চলে আসবে। ডাউনলোড করার সময় যদিও ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন হয় কিন্তু পড়ার সময় দরকার হয় না। বর্তমান সময়ে অনেকেই ই—বুক পছন্দ শুরু করেছে। আপনিও সঙ্গী করে নিতে পারেন ই—বুককে। মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ডিভাইসগুলোতে চার্জ থাকলে ইবুক যখনতখন যেখানে খুশি বই পড়তে পারেন। এমনকি অন্ধকারেও ইবুক পড়তে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ডিভাইসের স্টোরি বা মেমোরি (জায়গা) অনুযায়ী যত সম্ভব ইবুক সংগ্রহে রাখতে পারেন। ইবুক মাধ্যমে সর্বদা হাজার হাজার বই সাথে থাকায়, মনে হবে একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থাগার বহন করছেন।


ভ্রমণবান্ধব

স্বাভাবিকভাবেই মুদ্রিত বই ভারি হয়ে থাকে। আর একসাথে তো কয়েকটা মুদ্রিত বই রাখা অনেকটা অসম্ভবই বলা যায়। সে কারণে ই—বুক পছন্দের কারণের মধ্যে অন্যতম। শুধু একটি ডিভাইসের মাধ্যমে অনেক অনেক বই সাথে রাখা যায়। সেখান থেকে যখন ইচ্ছে বেছে বেছে পছন্দের বইটি পড়া যায়। সে কারণে যত দূরেই ভ্রমণে যাওয়া হোক না কেন, সাথে বহন ও সংগ্রহে রাখা সহজ। মনে হবে যেন আপনার লাইব্রেরীর তাক থেকে বই খুলে পড়তে বসেছেন।


চোখে চাপ হ্রাস

ই—বুকের আরেকটি আকর্ষণীয় সুবিধা হল, চোখের উপর কম চাপ সৃষ্টি হওয়া। চোখের আরামদায়ক স্তর অনুযায়ী সহজেই ডিসপ্লের আলো সমন্বয় করে নেওয়া যায়। বইটি পড়তে প্রয়োজনে জুম এবং আউট করা যায়।


অপ্রয়োজনীয় স্থান

ই—বুক কম জায়গা দখল করে। ই—বুক রাখার জন্য কোন নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন নেই। কম্পিউটার বা যেকোন রিডিং ডিভাইসে শত শত, এমনকি হাজার হাজার ই—বুক একসাথে রাখা যায়। একটি বুকশেলফের চেয়ে ই—বুক লাইব্রেরী সাজিয়ে রাখা বা পরিচালনা করা সহজ। এছাড়াও এটা বাড়ির জায়গা দখল করে না, এমনকি বিশৃঙ্খল হয় না।


আরও যেসব সুবিধা রয়েছে


* ইবুকগুলো বৃক্ষ রক্ষা করে।

* ইবুকগুলো সস্তা, এমনকি প্রায় বিনামূল্যে।

* ইবুক পড়ার জন্য কোনও ই-রিডারের প্রয়োজন নেই।

* ইবুকগুলো পরিবেশবান্ধব।

* বহন করা, ধার নেওয়া এবং কেনা সহজ।

* ইবুক প্রযুক্তির উন্নতির কথা জানান দেয়।




POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট