স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ১৩ ধাপ
BY
Nadim Majid
কোনো একটি কমিউনিটির সাথে যুক্ত হওয়ার সুন্দর একটি পথ হল স্বেচ্ছাসেবা। স্বেচ্ছাসেবার অভিজ্ঞতা আপনার সিভিতে যোগ করতে পারবেন এবং এটি অন্য আবেদনকারীর কাছ থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার আগ্রহ এবং সময়সূচির সাথে মিলে এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবার কাজে যোগ দেয়া। এ লেখায় আমরা আলোচনা করবো, কেন স্বেচ্ছাসেবা গুরুত্বপূর্ণ, আপনার এলাকায় কিভাবে স্বেচ্ছাসেবার কাজ খুজে পেতে পারেন এবং স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
স্বেচ্ছাসেবা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
স্বেচ্ছাসেবা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটির মাধ্যমে অলাভজনক সংগঠনসমূহ তাদের কমিউনিটিতে ভাল সেবা দিতে পারে। বিভিন্ন দাতব্য এবং অন্যান্য সংগঠনও তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবীদের উপর নির্ভর করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক ব্যতিত কোনো অলাভজনক সংগঠন সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে না।
স্বেচ্ছাসেবার আরো সুবিধা হল:
অর্থ সাশ্রয়: অলাভজনক সংগঠনের কিছু কাজ থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের বেতনভূক্ত ব্যক্তি দিয়েও করানো যায় আবার স্বেচ্ছাসেবী দিয়েও করানো যায়। সে সব কাজ স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে করালে প্রতিষ্ঠানের অর্থ সাশ্রয় হয়ে থাকে।
স্থানীয় সমস্যার সমাধান: স্থানীয়ভাবে এমন কিছু সমস্যা থাকে, যা স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়েই সমাধান করা যায়। এ কাজের জন্য বেতনভূক্ত কর্মচারীর প্রয়োজন হয় না। স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে এসব কাজ করালে তা সমাজে ভাল ফলাফল নিয়ে আসে।
অসহায় পরিবারকে সাহায্য: আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবার আছে, যাদের সাধারণত কেউ সাহায্য করে না। স্বেচ্ছাসেবকগণ এসব পরিবারকে সাহায্য করতে পারে।
শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতকরণ: স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা যায়।
অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা সৃষ্টি করা: স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকগণ অভিজ্ঞতা লাভ করে। স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা দক্ষ হয়ে উঠে।
কিভাবে স্বেচ্ছাসেবক হবেন
স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি একজন দারুন স্বেচ্ছাসেবকে পরিণত হতে পারেন।
১. আপনাকে নাড়া দেয় এমন সমস্যা চিহ্নিত করুন
এমন একটি সংগঠন বা সমস্যা চিহ্নিত করুন যা নিয়ে কাজ করলে আপনি আনন্দ পাবেন। একটু সময় নিয়ে ভাবুন, আপনি আসলে এ সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চান কিনা। যেমন, প্রতিবন্ধী অধিকার নিয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে। তাহলে আপনি প্রতিবন্ধী কেন্দ্রসমূহে স্বেচ্ছাসেবার কাজ করলে আনন্দ পেতে পারেন। আপনার ভাল লাগা এবং আগ্রহের জায়গা নিয়ে কাজ করলে আপনি স্বেচ্ছাসেবার কাজ করে বেশ আনন্দ পাবেন।
২. সেবা দিতে চান এমন দক্ষতা ও জ্ঞান চিহ্নিত করুন
বিভিন্ন সংগঠন নির্দিষ্ট দক্ষতাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক চেয়ে থাকে। সে সব পদে আবেদন করতে চাইলে আপনার সে ধরনের দক্ষতা-ই থাকতে হবে। যেমন, কোনো প্রাণী শেল্টারের প্রশাসনিক স্বেচ্ছাসেবক পদের জন্য তারা এমন স্বেচ্ছাসেবক-ই চাইবে, যাদের ইতোপূর্বে প্রাণী ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার এমন সব দক্ষতা চিহ্নিত করুন, যা দিয়ে নির্দিষ্ট কোন পদে সেবা করতে পারেন।
৩. স্বেচ্ছাসেবক রিজিউম তৈরি করুন
একটি স্বেচ্ছাসেবক রিজিউম তৈরি করুন। যেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পূর্বের কাজগুলো থাকবে। সে রিজিউমে আপনার দক্ষতাসমূহ তুলে ধরুন এবং আগ্রহের জায়গাও উপস্থাপন করুন। একটি সুন্দর রিজিউম যে কোনো সংগঠনকে সহজেই তাদের সঠিক স্বেচ্ছাসেবক খুঁজে নিতে সাহায্য করে।
৪. কতটুকু সময় দিতে পারবেন, তা নির্ধারণ করুন
আপনি কোনো কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিযুক্ত হলে সপ্তাহে বা মাসে কত ঘণ্টা সময় দিতে পারবেন, তা নির্ধারণ করুন। যেমন, আপনি যদি কোনো পূর্ণকালীন চাকরি করে থাকেন, তাহলে সাধারণ অফিস সময়ে আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সময় দিতে পারবেন না। আপনাকে ছুটির দিনে কিংবা অফিস সময়ের পরের কথা চিন্তা করতে হবে।
অন্যদিকে, আপনি গৃহিনী হয়ে থাকলে বিকেলের দিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য সময় বের করতে পারবেন। আপনি স্বেচ্ছাসেবার কাজে কত ঘণ্টা সময় দিতে পারবেন, সে বিষয়ে বাস্তববাদী হোন। পারবেন না, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি কখনো দিতে যাবেন না।
৫. আপনার কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবার সুযোগের জন্য গবেষণা করুন
আপনি যখন আপনার আগ্রহ এবং সময়সূচি জানতে পারবেন, তখন আপনি আপনার কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ খুঁজতে পারবেন। যে বিষয়ে আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চান, সে বিষয়ে বা সে পজিশনে স্বেচ্ছাসেবার খোঁজ জানার জন্য আপনি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখতে পারেন। আপনার আগ্রহ আছে- এমন অলাভজনক সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগপ্রক্রিয়া না চললে লাভজনক প্রতিষ্ঠানেও স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ আছে কিনা সে খবর নিতে পারেন।
৬. স্বেচ্ছাসেবক ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন
স্বেচ্ছাসেবার জব পোস্ট নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজেও ঢু মারতে পারেন। সে সব সাইটে আপনি আপনার দক্ষতা, অগ্রাধিকার, সময়সূচি জানিয়ে রাখতে পারেন। ফেসবুক গ্রুপ হলে আপনার দক্ষতা, অগ্রাধিকার এবং সময়সূচি পোস্ট করে রাখতে পারেন।
৭. প্রাসঙ্গিক তথ্য জোগাড় করুন
কোনো স্বেচ্ছাসেবক পদে আবেদনের পূর্বে সে পদ সম্পর্কে পুরোপুরি জানুন। সেখানে আপনার কি কাজ হবে, সপ্তাহে বা মাসে কত ঘণ্টা সময় দিতে হতে পারে, এ ধরনের কাজ করার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ নেয়া লাগবে কিনা তাও জেনে নিতে পারেন।
৮. স্বেচ্ছাসেবক পদে আবেদন করুন
অনেক স্বেচ্ছাসেবা পদে আবেদনপত্র জমা দেয়ার বিষয় থাকে। হতে পারে এসব পদ পেশাদার না, এখান থেকে আপনি বেতন পাবেন না। কিন্তু আপনাকে সম্পূর্ণ পেশাদার পদ মাথায় রেখে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রে ব্যকরণ এবং বানানের বিষয়গুলো সময় নিয়ে দেখবেন। যদি তারা রেফারেন্স চেয়ে থাকে, তাহলে তা দিতে হবে। এমনকি এ পদে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে কর্তৃপক্ষ আপনার সাক্ষাৎকারও নিতে পারে।
৯. আবেদনের পরে ফলোআপ করুন
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কোনো পদে আবেদনের দুই-তিনদিনের মধ্যে নিয়োগদাতার কাছ থেকে কোনো তথ্য না পান, তাহলে তাদের সাথে ফলোআপ করুন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকে এবং তাদের জনবলও সীমিত হয়ে থাকে। তাই, তাদের কাছ থেকে জবাব পেতেও দীর্ঘসময় লাগতে পারেন।
ফলোআপের সময় আপনার আবেদন তারা পেয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন এবং এ পদে যে কাজ করতে আপনি আগ্রহী, তাও জানাতে পারেন।
১০. প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করুন
আপনি কোনো স্বেচ্ছাসেবক পদের জন্য নির্বাচিত হলে তার সাথে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করুন। সাধারণত এসব প্রশিক্ষণ ছোট আকারের হয়ে থাকে, আবার কিছু কিছু পদে কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেশন বা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে।
১১. ন্যূনতম প্রতিশ্রুতিতে শুরু করুন
আপনি কোনো স্বেচ্ছাসেবক পদে প্রথম যোগদান করে থাকলে ছোট আকারে প্রতিশ্রুতি দিন। ছয় মাস বা এক বছর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি না দিয়ে এক মাস বা দুই মাসের প্রতিশ্রুতি দিন। এ পদ এবং সংগঠনকে আপনি উপভোগ করছেন কিনা দেখুন। যদি দেখেন, এ কাজ আপনার আয়ত্ত্বের মধ্যে রয়েছে এবং কাজ করে মজা পাচ্ছেন, তাহলে এ কাজের জন্য আরো বেশি সময় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন।
১২. পেশাদার হোন
আপনার স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজকে মনে করুন, একটি পেশাদার কাজ। এখানে সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। দেয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। কাজ করার সময় সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব মেনে চলুন। অলাভজনক সংগঠনসমূহ তাদের কাজে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে পেশাদারিত্বের বিষয়টি খুঁজে থাকে। তাই, আপনি তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য থাকুন এবং পেশাদার আচরণ করুন যাতে সে প্রতিষ্ঠানে আপনার কাজের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
১৩. স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করুন
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কোনো পদে যোগ দেয়ার কয়েক মাস পরে নিজেকে মূল্যায়ন করুন।
যদি সে কাজে আগ্রহ না পান, তাহলে অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ খুঁজুন। আবার, বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানে আছেন, সেখানে যদি আপনার পছন্দের স্বেচ্ছাসেবামূলক পদ খালি থাকে, তাহলে আপনার সমন্বয়কের সাথে কথা বলুন।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google