Home পরামর্শ

অন্তর্মুখীদের জন্য সেরা ৫টি চাকরি

অন্তর্মুখীদের জন্য সেরা ৫টি চাকরি

5 Min read

Saturday, November 4th 2023



গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যারিয়ারের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একজন কর্মীর ব্যক্তিত্ব বিশেষ প্রভাব রাখে। যেমন- উদ্যোক্তাদের মধ্যে সাধারনত ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা থাকে। গ্রাফিক ডিজাইনররা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই সৃজনশীল হয়ে থাকেন; তাদের চিন্তার ক্ষেত্র অসীম। একই সময় প্রযুক্তি পেশাজীবিরা স্বাধীনচেতা হয়ে থাকেন। এ কারণে আপনি কোন শ্রেণির তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি হতে চান, কোন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান; তা জানার চেস্টা করুন। এরপর আপনার ব্যক্তিত্ব ও চাহিদা অনুযায়ী পছন্দসই পেশা বেছে নিন। অর্থাৎ আপনি অন্তর্মুখী না কি বহির্মুখী সে অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করুন।

 

আপাত দৃষ্টিতে করপোরেট জগতে কেবল বহির্মুখী স্বভাবের মানুষরাই টিকে থাকতে পারেন, এমন মনে করা হয়। কেননা সেখানে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে, বিশাল সুযোগ রয়েছে, যা অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। এসব পেশায় স্বাধীনভাবে কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে, গভীর চিন্তা এবং সতীর্থদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ারও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

 

তাই আপনি যদি অন্তর্মুখী হয়ে থাকেন চিন্তার কিছু নেই, বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস অনুযায়ী ৫টি চমৎকার পেশা দেখে নিতে পারেন।

 

ডেটা অ্যানালিস্ট

অনলাইনে চাকরি অনুসন্ধান প্ল্যাটফর্ম গ্লাসডোর জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডেটা অ্যানালিষ্টের গড় বেতন ৬২ হাজার ডলার থেকে শুরু হয়।

 

আমাদের দেশেও এই পেশাজীবিদের গুরুত্ব বাড়ছে। আধুনিক ব্যবসায় ও স্টার্টআপগুলোর জন্য ডেটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে অন্তর্মুখী স্বভাবের কর্মীদের বেলায় এই পেশাটিতে তাদের সামর্থ্য প্রমানের এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। ডেটা অ্যানালিস্টরা বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন এবং অপরিসীম তথ্য-উপাত্ত, স্প্রেডশিট, জরিপ প্রভৃতি নিয়ে কাজ করেন যাতে চলতি ধারা ও প্যাটার্ন বজায় রাখা সম্ভব হয়। এই পেশায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, যা অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের চরিত্রের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে যায়। কাজেই এমন পরিবেশে কাজ করার জন্য আপনি যোগ্য ব্যক্তি।

 

এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে

শিক্ষার্থীরা এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে পরিসংখ্যান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান বা ডেটা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন। তবে ইতোমধ্যে স্নাতক সম্পন্ন করে ফেললে সমস্যা নেই। কেননা অনেক বুট ক্যাম্প এবং সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম রয়েছে যেখানে এনরোল করতে পারেন, যাতে ডেটা সংক্রান্ত দক্ষতা তীক্ষ্ন করা যাবে। এছাড়া এসকিউএল, পাইথন ও আর-এর মতো কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারেন।

 

ট্রান্সক্রাইবার

চাকরি অনুসন্ধান প্ল্যাটফর্ম ইনডিড অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে একজন ট্রান্সক্রাইবারের বেতন শুরু হয় ২৯ হাজার ডলার দিয়ে।

 

অনলাইনে যেহেতু অনেক মানুষ স্থিরচিত্রের তুলনায় ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন, তাই কথাগুলো বা বক্তব্যগুলোকে টেক্সট করার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে সাবটাইটেল যুক্ত করা, এমনকি টিকটক ভিডিওতে ক্যাপশন জুড়ে দেওয়ার মতো কাজ। এই কাজ যিনি করেন, তাদের বলা হয় ট্রান্সক্রাইবার (ট্রান্সক্রিশনিস্ট)। এই পেশাজীবিরা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং দ্রুত টাইপ করেন। তারা প্রায়ই রিমোটলি কাজ করে থাকেন, যা অন্তর্মুখীদের জন্য যুতসই। এজন্য তারা সুবিধাজনক স্থানে বসে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। তারা আদালত প্রতিবেদকের সহকারী হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পান। এছাড়া চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য তারা কাজ করেন।

 

যেভাবে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়া যায়

ট্রান্সক্রাইবারের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। তবে টাইপিং স্পিড দ্রুতগতির হওয়া চাই। একই সঙ্গে মনোযোগী শ্রোতা হতে হবে, যাতে বক্তার কথা সঠিকভাবে শোনা যায়, বুঝে লেখা যায়। একই সময় ভুলভ্রান্তি এড়ানোর উপায় জানতে হবে। এই কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে উচ্চারণ সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকা জরুরি।

 

কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স (কিউএ) টেস্টার

গ্লাসডোর অনুযায়ী কিউএ টেস্টারের গড় বেতন ৫৬ হাজার ডলার থেকে শুরু।

 

আমাদের জন্য প্রতিভাবান উদ্যোক্তারা নানা ধরণের অ্যাপ তৈরি করছেন। সেসব অ্যাপ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না কিংবা তা জনসাধারনের উপকারে আসবে কি না; এগুলো যাচাই করার দায়িত্ব কিউএ টেস্টারের। এই ধরণের পেশাজীবিদের বেশির ভাগ কাজই কোনো পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা পণ্যের বেলায় তাদের দায়িত্ব বেশি। তারা কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পণ্যটির যাচাইবাছাই সম্পন্ন করেন। কোনো সমস্যা থাকলে সমাধান বাতলে দেন। এরপর তা ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন উৎপাদকরা। তাই আপনি যদি পাজল সমস্যার সমাধান করতে পছন্দ করেন কিংবা সফটওয়্যারের ত্রুটি সারিয়ে তুলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এই চাকরি আপনার জন্য।

 

ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

অনলাইন শিক্ষার ওয়েবসাইট কোরসেরার মতে, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স টেস্টারের কম্পিউটার বিজ্ঞান, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন্স বা তথ্য প্রযুক্তির ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। এছাড়া গুগুল, লিংকডইন লার্নিং, ডেটাক্যাম্পসহ এমন সংস্থা থেকে সার্টিফিকেট নিতে পারেন। বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের ধারনা থাকা জরুরি। বিশেষ করে নিজের চিন্তাচেতনাকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও সৃজনশীলতাকে।

 

নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যানালিস্ট

গ্লাসডোর জানিয়েছে, এই পেশাজীবিদের গড় বেতন ৬০ হাজার ডলার থেকে শুরু।

 

বর্তমান তথ্য বিস্ফোরনের যুগে সহজে তথ্য প্রাপ্তি ঘটছে। কর্মস্থলে বিশেষ করে করপোরেট জগতে ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভূমিকা রাখে তথ্য। অর্থাৎ নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যানালিস্টদের কদর রয়েছে। কোনো সংস্থার গবেষণা ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম সঠিকভাবে নিরূপনে তাদের গুরুত্ব অপরিহার্য। কোনো প্রকল্প বা কাজকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন এই পেশাজীবিরা, যা অন্তর্মুখীদের জন্য সহায়ক।

 

যেভাবে হবেন    

অনেক প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেমন, গবেষণা, তথ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্য সংস্থা ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনা একটি পেশার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পেশায় আসার সবচেয়ে সহজ ও উত্তম পথ হচ্ছে- এন্ট্রি লেভেলে ‘ডেটা এন্ট্রি’-এর কাজ করা। এছাড়া প্রশাসনিক কাজ দিয়েও ক্যারিয়ার শুরু করা যেতে পারে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নলেজ ম্যানেজারের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন।

 

এসইও রাইটার

দেশভেদে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও) রাইটারের গড় বার্ষিক বেতন ৪৬ হাজার ডলার বলে জানায় গ্লাসডোর।

 

গুগল, ইয়াহু, বিং বা অন্য যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন যে স্বয়ংক্রিয় নিয়ম বা পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য খোঁজার কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজকে ওপরের দিকে দেখায় তা সম্ভব এসইও রাইটারদের কারণে। একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যেন সঠিক তথ্য খুঁজে পান, সে জন্য এই পেশাজীবিরা সেই তথ্যকে সার্চ ইঞ্জিনের উপযোগী করেন। এসইওর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কোন তথ্য খুঁজছেন, কোন ধরনের সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন, কী ধরনের শব্দ বা কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করছেন এবং কী ধরনের কনটেন্ট তারা চান সে সম্পর্কে জানার এবং তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্কিং করান এসইও রাইটাররা। অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষদের জন্য এই কাজটি অপার সম্ভাবনাময়।

 

এসইও রাইটার হওয়ার উপায়

সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন ও সর্বোচ্চ ফল পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরণের কোর্স চালু রয়েছে। সরকারের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসআইপি) ও লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে বিনা খরচে যেকোনো স্থানে থেকে এ বিষয়ের ওপর কোর্স সম্পন্ন করতে পারেন। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় এগুলো যুগোপযোগী কোর্স।




POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট