Home পরামর্শ

আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াতে সঞ্চয় করুন

আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াতে সঞ্চয় করুন

8 min read

Saturday, August 19th 2023



রাকিব সাহেব একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
অফিস থেকে বাসায় আসা যাওয়া করতে হয় বাসে। দূরত্বও কম না। ৬-৭ কিলোমিটার। নিত্যদিন বাসে ঝুলেঝুলে অফিসে যেতে তার ইচ্ছা করে না। রাত-বিরাতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে খারাপ লাগে।
এসব সাত-পাঁচ ভেবে একটি মোটর সাইকেল কেনার কথা ভাবছেন। ভাবলেইতো আর হয় না।  একটি ভালমানের নতুন মোটরসাইকেলের কথা ভাবতে গেলে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। অথচ, চাকরি থেকে তার মাসিক আয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা।
রাকিব সাহেবের জন্য একটি সমাধান হতে পারে সঞ্চয়। সঞ্চয় নিয়ে আমাদের সবার-ই কমবেশি ভাল ধারণা থাকলেও বেশিরভাগের-ই সঞ্চয় করা হয়ে উঠে না। মাস শেষ হলে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে মেটাতে হাতের টাকা শেষ হয়ে যায়।
অথচ একটু হিসেব করে খরচ করলেই মাস শেষে একটি টাকা জমা থেকে যায়। যা মাসেমাসে সঞ্চয় করতে পারেন।

সঞ্চয় কি?
সঞ্চয় নিয়ে অনেক রকম সঙ্গা আছে। তবে আমার সঙ্গা হল,  'আপনার আয় থেকে ভবিষ্যতে কাজে লাগানোর জন্য একটি অঙ্ক জমা রাখাকে সঞ্চয় বলে।'

সঞ্চয় কেন প্রয়োজন?
মানসিক শান্তি
 সঞ্চয়ের অভ্যাস থাকলে আপনার ভেতর একটি মানসিক শান্তি কাজ করবে। আপনি ধীরস্থির থাকবেন এবং ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে পারবেন।
সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
সঞ্চয় আপনার সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতে সহযোগিতা করবে। ধরেন, আপনি যে বাসায় থাকেন, সেখানে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। প্রতি মাসে কিছু টাকা জমানো শুরু করলে পাঁচ বছর পরে আপনি সে সঞ্চয় দিয়ে এক টুকরো জায়গা কিনতে পারবেন। এর পাঁচ বছর পরে সেখানে আপনি বাড়ি করার কাজ শুরু করতে পারবেন।
শর্টটার্ম লক্ষ্যগুলো পূরণ
আপনি একটি টিউশন করান। সে টিউশনে আপনাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেয়। বাড়ি থেকে আপনাকে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে আপনার হাত খরচ হয়ে যায়। আপনার সঞ্চয়ের কোনো রকম অভ্যাস না থাকলে সে টাকা দিয়ে কি করবেন!  
মাসশেষে অপ্রয়োজনে কোনো বন্ধুকে দামি জায়গায় ট্রিট দিবেন, কিছুদিন পর পর আপনার হাতে থাকে স্মার্টফোন পরিবর্তন করবেন, বেশি বেশি ঘুরতে যাবেন ইত্যাদি।
টিউশনের পুরো টাকা খরচ না করে কিছু টাকা জমাতে পারেন। আপনি খেয়াল করে দেখুন, প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে জমালে এক বছরে আপনার সঞ্চয় হবে ৩৬ হাজার টাকা। তিন বছরে আপনার সঞ্চয় হবে এক লাখ ৮ হাজার টাকা।
যা দিয়ে আপনি চাইলে ভাল মানের একটি ল্যাপটপ কিনতে পারেন। কিনতে পারেন অফিসে যাতায়াতের জন্য একটি মোটরসাইকেল। এমনকি অনেকে সে মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ করে নিজের জীবিকা নির্বাহও করতে পারেন।
জরুরি প্রয়োজন মেটানো
কথায় আছে, বিপদের হাত-পা থাকে না। নিজে বা আপনজনের কেউ বিপদে পড়লে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে প্রয়োজন হয় অর্থের।
খবরে শোনা যায়, সে অর্থের সংস্থান করতে সুদে টাকা নিয়ে সময়মত শোধ করতে না পেরে ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয়েছে।

মনোবল বৃদ্ধি
সঞ্চয় আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। মনোবল বাড়াবে। সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নপূরণ
সঞ্চয় আপনার দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নপূরণে সাহায্য করবে। যেমন, কেউ গাড়ি কিনতে চান, মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমালে ১০ বছরে আপনি পাবেন ৬ লাখ টাকা। এ জমানো যদি ঝুঁকিহীন প্রক্রিয়া ব্যাংকে বা সঞ্চয়পত্রে হয়, তা ১০-১২ লাখে অঙ্কে পৌছাবে। অনায়াসেই এ টাকা দিয়ে আপনি গাড়ি কিনতে পারেন।

সঞ্চয় করার গুরুত্বপূর্ণ ৮ পদ্ধতি

প্রতিমাসেই আমাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হয়ে থাকে। তারপরও সঞ্চয় করা জরুরি। আর, এ জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আপনার খরচে নাগাল টানতে নিচের পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করতে পারেন।
এক. খরচের হিসাব রাখুন
প্রতিদিন কোন খাতে কত টাকা খরচ করছেন, তার নোট রাখুন। মাস শেষে দেখুন, চাইলে কোন খাতে কত টাকা সেইভ করতে পারতেন। যেমন, অফিসে আসা-যাওয়ার সময় রিকশা ব্যবহার করেন। আসতে যেতে ৬০ টাকা রিকশা ভাড়া চলে যায়। অফিসে যাওয়ার সময় রিকশায় গেলেও আসার সময় ঠিক-ই হেঁটে আসতে পারতেন। এতে মাসে ৬০০ টাকার মত বেঁচে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
খরচের হিসাব রাখার জন্য এক্সেল, স্প্রেডশিট কিংবা অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।


দুই. বাজেটে সঞ্চয় নামে আলাদা ক্যাটাগরি রাখুন

মাস শেষে বেতন পেলে তা খরচ হতে দুইদিন-ও লাগে না। তাই, বেতন পেলে সঞ্চয়ের টাকা আলাদা করে রাখুন। নির্দিষ্ট জায়গায় জমা রাখুন।

তিন.  অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করুন

আমাদের খরচের বড় একটি অংশ অপ্রয়োজনীয় খাতে হয়ে থাকে। যেমন, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্সসহ জনপ্রিয় সব ওটিটি প্লাটফর্মে সাবস্ক্রিপশন করা প্রয়োজন হয়ে যায়। চাইলে আপনি প্রায়োরিটি অনুসারে একটি মাধ্যম রেখে বাকি মাধ্যম ক্লোজ করে দিতে পারেন।
এক্ষেেত্রে যেমন বিনোদনের খরচ কমাতে পারেন, পাশাপাশি একটি জিনিস কেনার আগে একাধিকবার ভাবতে পারেন, ঘোরাঘুরির খরচে বাজেট ট্যুর চিন্তা করতে পারেন।

চার, সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্র ঠিক করুন

আপনি যেমন মনেমনে আপনার জীবনের গোল ঠিক করেছেন, স্বপ্ন দেখেন, একসময় নিজেকে কোন পজিশনে দেখতে চান, ঠিক সেভাবে সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেন।
সেটা হতে পারে ৩ বছর মেয়াদী, হতে পারে ৫ বছর মেয়াদী অথবা আরো বেশি।

পাঁচ, সঠিক পলিসি বেছে নিন

আপনার লক্ষ্য অনুসারে, একটি নির্দিষ্ট পলিসি বেছে নিতে পারেন। আপনার কারেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখার পরিবর্তে ডিপিএস অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখতে পারেন। সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা যেমন ৫০, ০০০ টাকা বা এক লাখ টাকা হলে সে টাকা তুলে এফডিআর করতে পারেন। সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য যেমন ১২ বছর, ১৫ বছর হলে ইন্সুরেন্স করতে পারেন।

ছয়. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা হল একটি নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত পেমেন্ট ক্রেডিট পাওয়া যায়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে এক্সট্রা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। কিন্তু এ কার্ড ব্যবহারে সতর্ক না হলে প্রতি মাসে মিনিমাম ফি দিতে দিতে ফতুর হওয়ার জোগাড় হয়ে যাবেন।
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিনলে ০% ইএমআই থাকলে তা করিয়ে নিন। তাহলে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট ইএমআই দিলেই হবে।
না হয় কেনার পরে দ্রুততম সময়ে ব্যাঙ্কে টাকা পরিশোধ করুন।

সাত. সেভিংসের গ্রোথ দেখুন
সেভিংসের গ্রোথ দেখলে আপনার টাকা বাড়বে না। কিন্তু নিজের ভেতর একটি তৃপ্তি থাকবে। আবার, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে নিজের পজিশন কোথায় বুঝতে পারবেন।

আট. জিরো ডে পালন করুন

প্রতিমাসে আপনি একদিন জিরো ডে পালন করুন। এ দিনে আপনি আপনার ট্রান্সপোর্ট খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ করবেন না। এ কাজের জন্য হয়ত আপনাকে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন, আগামীকাল জিরো ডে পালন করতে চাচ্ছেন। আবার, প্রতিদিন সকালে বাইরে নাস্তা করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে নাস্তা বাইরে না করে ঘরে করার আজ রাতেই সকালের উপযোগী কোনো নাস্তা বাসায় রেডি করে রাখুন।
দেখা যাবে, মাসে একটি দিনের জন্যই আপনি আপনার অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ সেইভ করতে পারছেন।

সঞ্চয়ের পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত
সাধারণত আয়ের ২০-২৫% সঞ্চয় করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সঞ্চয়ে অভ্যস্ত না হওয়ায় প্রতিমাসেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করে থাকি। তাই, শুরুতে এত বড় লক্ষ্য না রেখে আয়ের ১০% সঞ্চয় করতে পারেন। আবার, অনেকের দৈনন্দিন জীবনের খরচ অন্যকেউ যেমন বাবা-মা দিয়ে থাকে, তারা তাদের আয়ের আরো বেশি পরিমাণ সঞ্চয় করতে পারেন।

সঞ্চয় কোথায় করবেন

সঞ্চয় অবশ্যই নিরাপদ কোনো জায়গায় করবেন। সেটি হতে পারে ব্যাংক, বা নামকরা ইনস্যুরেন্স। যে প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করবেন, সেখানে সঞ্চয় করার আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পারেন। এক্ষেেত্রে সরকারি যে কোনো ব্যাংক সবসময়-ই নিরাপদ।

সঞ্চয় করতে গেলে আপনার বর্তমান জীবনে একটু টান পড়বে, কিন্তু ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর করতে সাহায্য করবে। তাই, নিজের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াতে সঞ্চয় করুন।




POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট