ইন্টার্নশিপ: চাকরি পাওয়ার সহজ ধাপ
পেশাগত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, নেটওয়ার্কিং সহ ক্যারিয়ারের পথ তৈরির
অন্যতম এক উপায় ইন্টার্নশিপ। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ইন্টার্নশিপ করা জরুরি হলেও, ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত স্নাতক পযার্য়ের
শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেয়। ফলস্বরূপ, ইন্টার্নশিপ
করা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী সময়ে পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবেও নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ
তৈরি হয়। আবার, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রেও
অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
ইন্টার্নশিপ কি?
সহজ ভাষায় বলা যায়, ইন্টার্নশিপ হলো অস্থায়ী, স্বল্পমেয়াদী এমন কাজ
যা ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
সাধারণত, উৎসব—পার্বন, অর্থবছর, বাৎসরিক শুরু, বিশেষ মেলা বা অনুষ্ঠান আয়োজন সহ
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মতো যখন খুশি ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিতে পারে। অনেক
প্রতিষ্ঠান কয়েক সপ্তাহ, মাসের জন্যও ইন্টার্ন নিয়োগ দিতে
পারে। এছাড়াও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বছরের যেকোনো সময় ইন্টার্নশিপ অফার করতে
পারে। খণ্ডকালীন ইন্টার্নশিপের জন্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের
বেছে নেন প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ইন্টার্নশিপ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বলা যায়, চাকরির বাজারে নতুনদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুবর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে, শিক্ষিত প্রত্যেকটি মানুষের জন্য ইন্টার্নশিপ গুরুত্ববহ হলেও শিক্ষার্থীদের
জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন বাস্তব জীবনের বিভিন্ন পরিবেশ—পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতাকে আরও এগিয়ে নেওয়া শেখায়
ইন্টার্নশিপ। এর ফলে ক্ষেত্রটিতে জানাশোনার পাশাপাশি সম্পর্ক ও অনেক সুবিধা তৈরি
হয়। ইন্টার্নশিপের সুবিধা বা উপকারিতা-
অভিজ্ঞতা: ইন্টার্নশিপের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো হাতে-কলমে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়, যা পরবতীর্তে ক্যারিয়ার গড়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
নেটওয়ার্কিং: ইন্টার্নশিপের সময়কালে
প্রতিষ্ঠান সমূহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মী, সহকর্মী, ব্যক্তিদের সাথে পেশাদার যোগাযোগ (নেটওয়ার্ক) তৈরি হয়। যা পরবতীর্তে চাকরি
খুঁজে পেতে বা আরও দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।
পূর্ণকালীন চাকরি: ইন্টার্নশিপের ফলে
ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন (ফুলটাইম), খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) চাকরির অফার বেশি বেশি পাওয়া যায়।
প্রফেশনাল সিভি: ইন্টার্নশিপ একজন
শিক্ষার্থী বা অন্যদেরও প্রফেশনাল জীবনবৃত্তান্ত তৈরিতে সহায়তা করে। কাজের
অভিজ্ঞতা,
দক্ষতা বা স্কিল হিসেবে ইন্টার্নশিপটা জীবনবৃত্তান্তে যুক্ত
করা যায়,
এর ফলে জীবনবৃত্তান্তটা প্রফেশনাল এবং নিয়োগকারী
প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
মেন্টরশিপ: ইন্টার্নশিপ চলাকালীন সময়
প্রতিষ্ঠানের কর্মকতার্দের কাছ থেকে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে পরামর্শ পেয়ে
থাকবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন পযার্য়ের
ব্যক্তি,
প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ক্যারিয়ার গাইডলাইন পাবেন। নেটওয়ার্ক
বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বতন কাউকে ক্যারিয়ার গাইড বা পরামর্শদাতা হিসেবে খুঁজে নিতে
পারবেন।
কোন সেক্টরে ইন্টার্নশিপ করবেন?
ইন্টার্নশিপ করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে, কোন সেক্টরে বা কী ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে চান। কারণ আপনার
প্রয়োজন বা আগ্রহ অনুযায়ী ইন্টার্নশিপ নিধার্রিত হলে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের
গতিপথও নির্ধারণ করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নিজেকে যেখানে দেখতে চান- সেসব
বিষয়ে প্রাধান্য দিন। সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ অধিকাংশ ইন্টার্নশিপ করার
সুযোগ দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা, প্রযুক্তি, প্রকৌশল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের
বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলো প্রতি বছর ফ্রেশারদের জন্য বেশ কিছু
ইন্টার্নশিপ দিয়ে থাকে, যা ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময়কাল
থাকে। কখনও কখনও বছরব্যাপীও ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম হয়।
ইন্টার্নশিপের সময়কাল
প্রতিষ্ঠান, সুযোগ—সুবিধা, প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টার্নশিপগুলোর
সময়কাল নিধার্রত হয়। তবে সাধারণ অধিকাংশ ইন্টার্নশিপের সময়কাল ৩ থেকে ৬ মাস
পর্যন্ত নিধার্রিত থাকে। কখনো কখনো ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ বা মাস দীর্ঘ হতে পারে। তবে
আপনি শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে একাডেমিক পড়াশোনার বাইরের সময়টা বা ছুটির সময়টা
পার্টটাইম হিসেবে ইন্টার্নশিপ বেছে নিন, এতে পড়াশোনার
পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও ঝালাই হয়ে যাবে।
দীর্ঘমেয়াদী ইন্টার্নশিপ (৬ মাস থেকে ১
বছর)
এই ইন্টার্নশিপের সুবিধা বলতে, প্রতিষ্ঠান ও কাজকে আয়ত্ত করতে, শিখতে এবং
প্রয়োগ করতে বেশ সময় পাওয়া যায়। ভুল হলেও শুধরে শেখার সুযোগ থাকে। এছাড়া
প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে, আপনি নিয়োগের জন্য তৈরি তাহলে
আপনাকে তাদের একজন হিসেবে নিয়ে নিবে। আর আপনাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার জন্য
অবশ্যই দীর্ঘ একটা সময় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। অসুবিধার মধ্যে বলা যায়, দীর্ঘ সময়টা পড়াশোনা বা কাজের বাইরে বের করা কষ্টকর। এছাড়া যথাযথ
ব্যবস্থাপনা ছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী ইন্টার্নশিপ কখনও
কখনও শেখার সুযোগ নষ্ট করে।
পার্ট টাইম ইন্টার্নশিপ (৩ থেকে ৬ মাস)
এই ক্ষেত্রে ইন্টার্নদের বেশ নমনীয়, মনোযোগি, আগ্রহী হতে হবে। কারণ স্বল্প সময়ে
অভিজ্ঞতা,
দক্ষতা অর্জন করতে হবে বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে। এছাড়া
পড়াশোনা বা খণ্ডকালীন কাজের মতো অনেক প্রতিশ্রুতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হতে
পারে। কম সময়ের মধ্যে অভিজ্ঞতাও তেমন অর্জিত হয় না, অনেক কাজ শেখা হয়ে ওঠে না, নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি
হয় না ইত্যাদি অসুবিধা তৈরি হয় এই ক্ষেত্রে। অনেক সময় অর্জিত অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ
ক্যারিয়ারের উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে না।
ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেতে করণীয়
* আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের
খোঁজ করুন। বাসার আশেপাশে বা কাছাকাছি প্রতিষ্ঠানসমূহে জানতে পারেন আপনার
প্রয়োজনীয় কাজটি তারা সম্পাদন করে কিনা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট, স্যোশাল মিডিয়া (বিশেষ করে লিংকডইন), স্যোশাল
মিডিয়ার ইন্টার্নশিপ তথ্যভিত্তিক গ্রুপ, পেইজ নিয়মিত
দেখুন। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্নশিপ সমন্বয়কারীর
যোগাযোগের তথ্য নোট করুন।
* ফোন বা ইমেলের মাধ্যমে ইন্টার্ন
সমন্বয়কারীর সাথে যোগাযোগ করুন। নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের
আগ্রহের কথা জানান। অবশ্যই যোগাযোগের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে টুকটাক জেনে রাখুন, যেন বুঝতে পারে প্রতিষ্ঠানের উপর
ছোটখাটো একটা গবেষণা করেছেন। কারণ এটি কেবল আপনার আগ্রহ প্রকাশ করে না, প্রতিষ্ঠানটিতে কাজটি
করছেন তা ইঙ্গিত করে।
* ফ্রেশার বা পূর্ববতীর্ অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশেষ স্কিল সহ পূণার্ঙ্গ একটি
সিভি তৈরি রাখুন। রাখতে পারেন একাডেমিক যৌথ কাজ বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা। জানিয়ে দিতে পারেন আপনার আগ্রহের পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ
থেকে প্রাপ্যতা।
* ইন্টার্নশিপে সুযোগ পাওয়ার অন্যতম
আরেকটা উপায় হলো- ইন্টার্ন হিসাবে নিয়োগ দিলে আপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান যেসব
সুবিধা পাবে, সেগুলো জানানো। কোন দক্ষতার বা যোগ্যতার
বলয়ে ইন্টার্নশিপটি আপনি পেতে পারেন বলেন মনে করেন সেটিও জানাতে পারেন।
* ইমেইল করার সময় সাবজেক্ট অপশনে
সংক্ষেপে ইমেলের উদ্দেশ্য উল্লেখ করুন। যেমন: ‘অরণ্য সৌরভ, সম্ভাব্য ইন্টার্নশিপ’ এর মতো কিছু লেখার চেষ্টা করুন। সাবজেক্ট অপশনে আপনার
নাম থাকায় ইমেলটি প্রাপকের স্পাম
ফোল্ডারে না—ও যেতে পারে।
* ব্যক্তিগত স্যোশাল মিডিয়া ব্যক্তিকে
তুলে ধরে। তাই স্যোশাল মিডিয়াগুলো প্রফেশনালভাবে সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। নাম, ঠিকানা, একাডেমি, অভিজ্ঞতা, স্কিল, প্রোফাইল—কভার ছবি সবখানে তথ্যসম্পৃক্ত করে প্রফেশনাল ব্যক্তিতে নিজেকে উপস্থিত করুন।
* ইমেইল বা ডাকযোগে পাঠানো চিঠি, সবক্ষেত্রেই পেশাদার ভাষা ব্যবহার করুন। এমনটা হলে আপনাকে এড়ানো অনেকটা
অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই প্রফেশনাল, পেশাদার কর্মী খুঁজে। সর্বদা নম্র ভাষায় কথা বলুন, রাগ বা অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকুন।
* আপনার সাথে যোগাযোগ করার তথ্য স্পষ্ট
কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। সবসময় আপ-টু-ডেট যোগাযোগের তথ্য অন্তভুর্ক্ত করুন, যেন দ্রুত আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এছাড়া ইমেলের শেষে আপনার ঠিকানা
উল্লেখ করুন যেন সরাসরি আপনাকে খুঁজে পেতে পারে।
পেইড ইন্টার্নশিপ নাকি আনপেইড
* ইন্টার্নশিপ আপনাকে বাস্তব বিশ্বের
দক্ষতা শিখতে এবং জীবনবৃত্তান্তে যোগ করার জন্য হাতে—কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ে উপকারের পারদ আপনার বেশি, সেজন্য পেইড
ইন্টার্নশিপ করবেন নাকি আনপেইড ইন্টার্নশিপ করবেন, সে বিষয়ে সবদিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
* অনেক সময় ইন্টার্নশিপের পজিশনের উপর
নির্ভর করে, ইন্টার্নদের স্যালারী দিতেও পারে আবার
নাও দিতে পারে। আনপেইড ইন্টার্নশিপগুলো সাধারণ স্নাতকের একাডেমিক ক্রেডিট হিসাবে
অনেকে গণ্য করে। তবে ইন্টার্নশিপ পেইড বা আনপেইড যাই হোক, ইন্টার্নের শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম এবং কাজের দায়িত্বের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে।
* পেইড ইন্টার্নশিপ পেতে হলে আপনাকে
শুরুতেই যে সব কাজ করতে হবে-
জীবনবৃত্তান্ত তৈরি, পেইড ইন্টার্নশিপের খোঁজখবর, শীঘ্রই আবেদন, ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি, ইমপ্রেস করার জন্য পোশাক বাছাই এবং সময়মতো সাক্ষাৎ করা।
* প্রতিষ্ঠান যদি ভ্যালুবল হয় বা ইতিবাচক
খ্যাতি থাকে- তাহলে নামী প্রতিষ্ঠানে আনপেইড ইন্টার্নশিপ করাও সার্থক হতে পারে।
কারণ নিশ্চিত যে, আপনি মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে
পারবেন।
* আপনার বাছাইকৃত ক্ষেত্রে যদি প্রচুর
প্রতিযোগিতা থাকে- তাহলে সে ক্ষেত্রে পেইড ইন্টার্নশিপ পাওয়া কঠিন হতে পারে। তখন
প্রয়োজনবোধে আনপেইড ইন্টার্নশিপই বেছে নিতে হতে পারে।
* পেইড ইন্টার্নশিপ যদি খুঁজে পান কিন্তু
যদিও দেখেন বিকল্প হিসেবে আনপেইড ইন্টার্নশিপটি এটার চেয়ে ভাল হবে তাহলে অবশ্যই
ভালোটা বেছে নিবেন।
* যদি প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণের সময়
(ইন্টার্নশিপের সময়) স্যালারী প্রদানে যথেষ্ট উদার হয় তাহলে যে কোনও উপায়ে
সেখানে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google