এক দশকে হারিয়ে যাবে এই ১০ পেশা
রানার চলেছে রানার...
দুর্দম, হে রানার
এতটাই আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী ছিল যে এই রানার পেশাজীবিদের নিয়ে কবিতা লিখে ফেলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। শ্রমজীবি রানাররা এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে তাদের নিয়ে এই কবিতাটিকে গানে রূপ দেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এত বিখ্যাত মানুষরা যে পেশা নিয়ে সৃষ্টিশীল কর্ম উপহার দিয়ে গেছেন, সেই পেশাটি অনেক আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যানবাহন উদ্ভাবনের ফলে রানারদের গুরুত্ব হারাতে থাকে, আরও পরে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন তাদের কাজে যানবাহনের ব্যবহার পেছনে ফেলে দেয়; শুরু হয় ইমেইলের ব্যবহার। বর্তমানে দাপ্তরিক কাজকর্ম ছাড়া ব্যক্তিগত কাগুজে চিঠি লেখা হয় কি?
এভাবে রানারের মতো সময়ের প্রয়োজনে হারিয়ে গিয়েছে বাইজি, দাস্তানগড়িয়া, পালকি বেহারা, ভিস্তিওয়ালা, পাঙ্খাওয়ালা, সাপুড়ে, ধুনারি, নৈচাবন্দ ইত্যাদি পেশা। এক সময় এসব পেশা বেশ রমরমা ছিল, এখন তা অতীত। তেমনি আজ যে পেশার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, এক সময় তাও হয়ত অতীত গল্পে রূপ নেবে। এজন্য শত বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়বে না।
আগামী দশ বছরের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে ১০টি পেশা। সময় যত গড়াবে, এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। তাই যেকোনো উপায়ে পেশাগুলো পরিবর্তন করুন। অথবা আগেভাগে জেনে রাখুন, এতে আখেরে আপনারই লাভ। দেশে বা বিদেশে যেখানেই ক্যারিয়ার গড়ুন না কেন, এমন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার। এ কারণে মানুষের কর্ম নিয়ে চিন্তার রেখা দীর্ঘ হচ্ছে। কেননা আগে যে কাজের জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজন হতো, এখন তা স্বয়ংক্রিয় হয়েছে, অর্থাৎ তাদের বদলে ব্যবহূত হচ্ছে এআই। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাবে অনেক পেশা।
রোবট আসছে...
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি-বিষয়ক মুক্ত সাংবাদিক (ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট) এন্ড্রু হেরিগ বলেন, আমি চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করেছিলাম- এআই দখল করতে যাচ্ছে এমন ১০টি পেশা কী? চ্যাটজিপিটি এর উত্তরে যা জানায়, তাতে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি। তবে কয়েকটি পেশার ভবিষ্যত দেখে কষ্ট পেয়েছি।
হেরিগের মতে, এই তালিকার কারণে পেশাজীবিরা সতর্ক হবেন। তাই দেখে নিতে পারেন আপনার বর্তমান বা কাঙ্খিত পেশাটিও এ তালিকায় রয়েছে কি না—
এক.
টেলিমার্কেটার
সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে টেলিফোন করে পণ্য বিক্রির প্রচার হচ্ছে টেলিমার্কেটিং। এই পেশায় কর্মরতদের বলা হয় টেলিমার্কেটার। সহজে এবং দ্রুত গ্রাহকদের কাছে তথ্য সরবরাহ করতে পারছেন টেলিমার্কেটাররা। অনেক প্রতিষ্ঠানে তাদের কদর রয়েছে। তবে এআইয়ের উত্থানের কারণে এই ধরনের পেশা গুরুত্ব হারাচ্ছে। ভবিষ্যতে এআই-নির্ভর চ্যাটবটগুলো সহজে ভোক্তার অনুসন্ধানের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। এমনকি কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী পন্য বিক্রিও করতে পারবে।
দুই.
ডেটা এন্ট্রি ক্লার্ক
কম্পিউটার সিস্টেমে তথ্য ইনপুট দেন ডেটা এন্ট্রি ক্লার্করা। তবে অপটিক্যাল ক্যারেকটার রিকগনিশন (ওসিআর) প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এআই-নিয়ন্ত্রিত ওসিআর প্রযুক্তি হাতের লেখা পড়তে পারে এবং তা ডিজিটাল টেক্সটে রূপান্তর করতে সক্ষম। এ কারণে ডেটা এন্ট্রি ক্লার্করা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন।
তিন.
বুককিপার
আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড ও অ্যাকাউন্টসের কাজ করে থাকেন বুককিপাররা। তারা যে কাজ করেন তা বুককিপিং বা হিসাবরক্ষণ নামে পরিচিত। তবে এআই-নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার উদ্ভাবনের ফলে বুককিপিংয়ের চাহিদা কমছে। এই ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে অ্যাকাউন্টসের ভুলত্রুটি, খরচের হিসাব এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিখুঁতভাবে দেয়া যায়। বিনিয়োগকারীদের সঠিক রিপোর্ট দেওয়া যায়। প্রয়োজনীয় চার্ট, গ্রাফ ও ডেটার তালিকা দিতে সক্ষম এসব সফটওয়্যার। তাই ব্যক্তি বুককিপারদের গুরুত্ব কমছে, বাড়ছে সফটওয়্যারের গুরুত্ব।
চার.
ব্যাংক টেলার
নগদ অর্থ লেনদেন এবং গ্রাহক সেবা দেন ব্যাংক টেলাররা। ব্যাংকগুলো ডিজিটাল হচ্ছে এবং আমানতকারীরা দোরগোড়ায় সেবা পেতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। তাই মোবাইল ব্যাংকিং এবং চ্যাটবটের কারণে ব্যাংক টেলারদের পেশাও ঝুঁকিতে রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংসেবার মাধ্যমে আমানতকারীরা নিজেদের লেনদেন নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারেন। একই সময় চ্যাটবট দিয়ে গ্রাহকসেবা সহজ করার পথে হাঁটছে অনেক ব্যাংক। এ ধরণের প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং স্বল্প খরচ ও সময়ে ঋণ প্রাপ্তিও নিশ্চিত করা যায়।
পাঁচ.
অভ্যর্থনাকারী
অতিথিদের অভ্যর্থনা, ফোনে উত্তর দেওয়া কিংবা কল করা রিসিপশনিস্ট বা অভ্যর্থনাকারীর পেশাগত দায়িত্ব। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের দিয়ে প্রশাসনিক কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া এআই-নির্ভর ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়েও উন্নত বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান রিসিপশনের কাজ সেরে ফেলছেন। এই ধরণের প্রযুক্তি দিয়ে ওপরের সব কাজ এবং আর অনেক টাস্ক করানো যায়।
ছয়.
প্রুফ রিডার
প্রুফ রিডার বা সম্পাদনা সহকারীরা কোনো ডকুমেন্ট বা নথিপত্রের বানান নির্ভূল, ব্যাকরণ, বিরাম চিহ্ন ইত্যাদি চেক করেন। কোনা লেখায় একটি ভুল শব্দ কিংবা অযাচিত বর্ণ বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা বা বিভ্রাট দূর করেন প্রুফ রিডাররা। তবে ইংরেজী ভাষায় লেখা কোনো ডকুমেন্টের জন্য তাদের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে, ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রোসেসিং (এনএলপি) প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে সম্পাদনা সহকারীদের গুরুত্ব কমছে।
সাত.
ট্রাভেল এজেন্ট
ট্রাভেল এজেন্টরা তাদের গ্রাহকদের (যাত্রী/পর্যটক) ভ্রমণ পরিকল্পনা ও বুকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। তবে অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্মগুলোর পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এআই-ভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্টে সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাভেল এজেন্টদের চাহিদা কমছে। একজন ট্রাভেল এজেন্ট কর্মী যেসব কাজ করতে সক্ষম, তার পুরোটা সম্ভব এআই-নিয়ন্ত্রিত ট্রাভেল এজেন্টকে দিয়ে, এমনকি এই কাজে মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষ হয় এই প্রযুক্তি।
আট.
কারখানা কর্মী
কোনো পণ্যের অ্যাসেম্বল করেন কারখানা কর্মীরা। তবে রোবট ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে কারখানায় কর্মরত কর্মীর চাকরি দিন দিন স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে। উপরন্তু রোবট দিয়ে কোনো বিরতি ছাড়াই একটানা কাজ করানো যায়। অর্থাৎ মানুষরূপী কর্মীর তুলনায় তারা বেশি উপযুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে কারখানার সব উৎপাদিত ও অনুৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে করে পণ্য খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা দূর হচ্ছে। বলা যায়, দিন দিন এই খাতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নয়.
কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি
ক্রেতা বা গ্রাহক, কিংবা ভোক্তার ইনকোয়ারি ও অভিযোগ সামলান কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধিরা। তাদের একটি প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবসায়ের প্রাণস্বরূপ গণ্য করা হয়। এই কারণে এই পেশায় প্রযুক্তির গুরুত্ব বাড়ছে, বিশেষ করে এআই-নিয়ন্ত্রিত চ্যাটবট পেছনে ফেলে দিচ্ছে ব্যক্তি কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধিকে। তাদের পরিবর্তে নানা ধরণের চ্যাটবট দিয়ে ক্রেতাদের সব ধরণের অনুসন্ধান ও অভিযোগ ‘রাউন্ড দ্য ক্লক’ বা ২৪ ঘন্টাই সামাল দেওয়া যায়। একই সময়ে এই কাজ সম্পাদনের জন্য অন্তত তিন জন ব্যক্তি কর্মীর প্রয়োজন পড়তে পারে।
দশ.
ড্রাইভার
গুরুত্বপূর্ণ পেশা ড্রাইভার। তারাই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাত্রী ও পণ্য আনা নেওয়া গুরুদায়িত্ব পালন করেন। তবে স্বয়ংক্রিয় যানবাহন তাদের পেশাকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। এ ধরণের যানবাহন সাধারণত চালকবিহীন হয়ে থাকে, যা অধিক গুরুত্ববহ এবং একই সঙ্গে নিরাপদও বটে। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, জীবন বদলে দেবে চালকবিহীন গাড়ি। এ ধরণের গাড়িতে থাকা ক্যামেরা, লেজার, রাডার সেনসর, জিপিএস ইত্যাদি দুর্ঘটনাসহ সব ধরণের বিপদ এড়াতে সাহায্য করে। সড়কে অন্য যানবাহন, সড়কের বাঁক, ট্রাফিক সিস্টেম, চিহ্ন ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সক্ষম। এমনকি আশপাশের গাড়িগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারে চালকবিহীন গাড়ি। ফলে নির্ঝঞ্ঝাটে সড়ক চলাচল সম্ভব। এ কারণে ব্যক্তি চালকের গুরুত্ব কমবে।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google