Home পরামর্শ

চাকরি করেন, আবার ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান

চাকরি করেন, আবার ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান

৮ মিনিট read

Thursday, October 12th 2023



আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা চাকরির পাশাপাশি নিজেই ব্যবসা শুরু করতে চান। এমন ব্যক্তিদের চাকরির পাশাপাশি ছোট আকারের ব্যবসা শুরু করার টিপস তুলে ধরেছেন নাদিম মজিদ

সুমিত সাহেব। একটি বেসরকারি অফিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছেন। তার মনের ভিতরে সুপ্ত বাসনা, তার যদি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতো। একসময় ব্যবসায় ভাল লাভের মুখ দেখলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ দিতে পারতেন।

অমিত বাবু। একটি সরকারি অফিসে একটি প্রজেক্টে কাজ করেন। মাস শেষে বেতন যা পান, ফরিদপুরের মত মফস্বল শহরের জন্য খারাপ নয়। কিন্তু মনের ভিতরে সবসময় একটি খচখচ কাজ করে। প্রজেক্টের চাকরি। একসময় প্রজেক্ট শেষ হয়ে যেতে পারে। আবার, চাকরিরও কোনো স্থায়ীত্ব নেই। এ চাকরি থাকতে থাকতে নিজের ব্যবসা শুরু করা যায় কিনা?

 

সুমিত বা অমিত বাবুর মত এমন চিন্তা ভাবনা অনেকেরই থাকে। অনেকে আশেপাশে খোঁজ-খবর নেন। অনেকে মনে মনে ভাবলেও সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু কাজে নামেন নি। এমন ব্যক্তিরা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করার জন্য নিচের পরামর্শগুলো যাচাই করে দেখতে পারেন।


এক. নিজের দক্ষতা সম্পর্কে জানুন: আপনি নিজের দিকে তাকান। নিজের কি কি দক্ষতা আছে, বুঝার চেষ্টা করুন। যেমন, অনেকের ভাল টাইপ করার দক্ষতা রয়েছে। অনেকের রয়েছে গ্রাফিক্স স্কিল। অনেকে আবার ভাল ভিডিও বানান। অনেকে সুন্দর বুঝাতে পারেন। অনেকে মানুষের সাথে সুন্দর আলোচনা করতে পারেন। অনেকের প্রেজেন্টেশন স্কিল ভাল। আপনার ভিতরে এ ধরনের কি স্কিল আছে, দেখুন। তার একটি তালিকা তৈরি করুন।


দুই. আপনার চারপাশের সুযোগসমূহ নোট করুন: আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন, সে এলাকায় কি ধরনের সুযোগ আছে, তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন, আপনাদের বাজারে দোকান-পাটের সংখ্যা চল্লিশটির বেশি। কিন্তু ফটোকপি বা প্রিন্টের কোনো দোকান নেই। এ কাজের জন্য ৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। আপনি এটিকে সুযোগ হিসেবে তালিকায় যোগ করতে পারেন। এ ধরনের কি কি সুযোগ আছে, তার তালিকা তৈরি করুন।


তিন. আইডিয়াকে যাচাই করুন: আপনার নোটে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ আসলেই তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বেন না। যেমন, আপনি দেখলেন, আপনাদের বাজারে কোথাও ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার ব্যবস্থা নেই। ধুম করে দোকান ভাড়া নিয়ে কম্পিউটার বা প্রিন্টার কিনে বসবেন না। আপনার এ আইডিয়াকে যাচাই করুন। প্রিন্টিং সার্ভিস দিলে মাসে আপনার কতটাকা আয় হতে পারে, নোট করুন। এ ধরনের কাজ কাদের লাগতে পারে, তার একটি হিসাব করুন।


আপনি প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত সময় দিবেন, সে অনুসারে কেমন আউটপুট আসতে পারে, তার একটি হিসাব করুন।

চার. আইডিয়াকে বাণিজ্যিক করুন: মনে রাখবেন, ব্যবসা করা আর চ্যারিটি করা এক জিনিস নয়। ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমদিন থেকেই লাভ-লোকসানের হিসেব করতে হবে। আপনি দেখলেন, সেখানে প্রিন্টিং সার্ভিসের চাহিদা আছে, কিন্তু  মাসে হাজার বিশেকের বেশি আয় হবে না। তাহলে নিজে দোকান না নিয়ে অন্য একজন ব্যবসা করছে, তার দোকানের একটি অংশ ভাড়া নেয়া যায় কিনা আলাপ করুন। আবার, আপনার কাজে ভ্যালু তৈরি করার জন্য প্রিন্টিং সার্ভিসের পাশাপাশি ফটোশপ দিয়ে ডিজাইন সার্ভিসও যোগ করতে পারেন। এ ধরনের কাজে আয়ের পরিমাণ ধরবেন ন্যূনতম, এবং ব্যয়ের পরিমাণ ধরবেন সর্বোচ্চ। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কালি, কাগজের খরচ- কোনো কিছুই হিসাবের বাইরে রাখবেন না।

 এতে ব্যয় থেকে আয় বেশি হলে ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।


পাঁচ. আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন: প্রতিদিন আপনার ব্যবসা থেকে কি পরিমাণ আয় হচ্ছে এবং ব্যয় হচ্ছে, তার একটি হিসাব রাখুন। মুখ পরিচিত ব্যক্তি যাদের বাকি দিচ্ছেন, তাদের বিষয়েও ভালভাবে নোট রাখুন। মাসশেষে হিসাব করুন, আপনার কত আয় হল এবং ব্যয় কত। প্রয়োজনে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

 

ছয়. কাস্টোমারকে প্রাধান্য দিন: এ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে অনেকে কম চার্জ রাখে। কিন্তু কাস্টমার ভাল সেবা পায় না। ফটোকপি মেশিনের কালি কমে আসলে কাস্টমার অভিযোগ দেয়ার আগে কালি রিফিল করে না। এতে নেতিবাচক কাস্টমার তৈরি হয়। তাই, কাস্টমারকে প্রাধান্য দিন।

 

সাত. প্রয়োজনীয়ক্ষেত্রে ‍ওয়েবসাইট তৈরি করুন: কিছু কিছু সার্ভিসের ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট ভাল ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে। যেমন, আপনি ভাল লোগো তৈরি করতে পারেন। আপনি আপনার একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করে নিন। সেখানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং ক্লায়েন্টলিস্ট যোগ করে দিন। এসইও ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট হলে গুগল থেকেও অনেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।

সর্বোপরি, আপনার সময়কে কাজে লাগান। অফিসশেষে বাসায় এসে শুয়ে-বসে থাকেন। খেলা দেখেন। ফেসবুক চালান। মুভি দেখেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে, আপনি আপনার সময় কাজে লাগিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হোক ছোট আকারের। ছোট আকারের ব্যবসায় সফল হলে সেবা বাড়াতে পারবেন। ব্যবসায় ভাল লাভ হলে ফুলটাইম চিন্তা করতে পারবেন। কিন্তু শুরু না করলে কিভাবে বুঝবেন, আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনি কিছু করছেন কিনা!




POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট