ভবিষ্যত গড়তে প্রয়োজন ক্যারিয়ার গাইডেন্স
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গাইডেন্স বা কর্মজীবনের নির্দেশনা আসে মূলত মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের
কাছ থেকে। তাদের নির্দেশনা বেশির ভাগ সময় সঠিক হলেও, আমাদের ইচ্ছা, অভিজ্ঞতা ও ভালোলাগা
প্রায়ই ব্রাত্য থেকে যায়। অভিভাবকদের চাহিদায় প্রার্থীর (আপনি নিজে) লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্খা ও ব্যক্তিত্বকে
কমই বিবেচনায় নেওয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে একটি
ভুল উপদেশের কারণে আপনি অনুপোযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন, এতে বছরের পর বছর
ধরে আপনি ভুল পথে পরিচালিত হতে পারেন এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও হতাশাজনক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে
পারেন। ফলে তিক্ততায় শেষ হয় প্রথম ক্যারিয়ার বা পুরো ক্যারিয়ার।
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গঠনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতিতে
কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য ‘সার্টিফায়েড এক্সপার্ট’-এর ধারণা এখনও নবজাতকের পর্যায়ে।
এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কোনো গবেষণাও নেই। এমনকি অনেক প্রার্থীর ধারণাই নেই যে, ক্যারিয়ারের শুরুতে
পেশাদারদার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত কিনা। পাশের দেশ ভারতের অবস্থাও একই। তবে সাম্প্রতিক
এক গবেষণায় দেখা গেছে,
‘ভারত অ্যাসপিরেশন্স রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি
ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের মধ্যে মাত্র ১৩ দশমিক ২ শতাংশ পেশাদার কাউন্সিলরদের
কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। ১৬টি রাজ্যে এই জরিপ পরিচালনা করে আইড্রিম ক্যারিয়ারস। তারা
জানিয়েছে, বাকী শিক্ষার্থীরা
কাছের মানুষদের কাছ থেকে ক্যারিয়ার গঠনের পরামর্শ নেন। জরিপের উপসংহারে বলা হয়েছে, এই অসচেতনতার কারণে
বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সঠিক পথে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন এবং ভবিষ্যত বিষাদের
হয়। অথচ উন্নত দেশগুলোর চিত্র বিপরীত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আমাদের দেশে বর্তমানে ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার অনেক খাত রয়েছে। তবু গুটিকয়েক, আরও নির্দিষ্ট করে
বললে, মাত্র ৫-৬টি
পেশায় ক্যারিয়ার ঝোঁক বেশি। যেমন ডাক্তারি, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও আইন প্রাথমিক পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
জ্ঞানের যে বর্ণিল এবং বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে সেদিকে হাঁটছেন কয়জন? যেমন ডেটা সায়েন্টিস্ট, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট
বিশেষজ্ঞ, ডেটা অ্যানালিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি
এক্সপার্ট, সোশ্যাল
মিডিয়া মার্কেটার, ক্লাউড
কম্পিউটিং প্রফেশনাল প্রভৃতি কারও পছন্দের প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে কী? এতে মনে হয়, আমাদের যুব সম্প্রদায়
কী ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তত। অথচ ক্যারিয়ারের মহাসড়কে ওঠার আগে এ বিষয়ে চর্চা করা উচিত।
আমাদের বুঝতে হবে ক্যারিয়ার গাইডেন্স আসলে কী। এর মধ্য দিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্য
এবং সঠিক পথ নির্ধারণ করে তা অর্জন করা যায়। এভাবে নিজেকে আবিস্কার করা যায়। এসডব্লিউওটি
বা সোয়াত সম্পর্কে জানা যায়। বর্তমানে ‘সোয়াত’ ধারণাটি নতুন শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত
করা হয়েছে।
এসডব্লিউওটি (সোয়াত) দিয়ে বোঝানো হয়েছে একজন শিক্ষার্থীর-
এস-স্ট্রেনথ (সামর্থ্য)
ডব্লিউ-উইকনেস (দূর্বলতা)
ও-অপোরচুনিটি (সুযোগ)
টি-থ্রেট (চ্যালেঞ্জ)।
কোনো শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশের আগে এ বিষয়ে, অর্থাৎ নিজের সোয়াত
সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে পারলে তার জন্য ভবিষ্যত জীবন সহজতর হবে নিশ্চিত। এর মাধ্যমে
নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা নিজেই বুঝতে পারবেন।
অন্যভাবে বলা যায়, নিজেকে
যাচাই করার জন্য সোয়াত নির্দেশক মেনে চলা উচিত। ফলে নিজের ব্যক্তিত্ব, লেখালেখির দক্ষতা, নানা চ্যালেঞ্জ
যেমন, সাক্ষাৎকারের
সময় নিজেকে উপস্থাপন প্রভৃতি জানা যাবে।
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং মূলত শুরু হয় স্কুল পর্যায়ে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত
যার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে তাদের দরকার পর্যাপ্ত সহায়তা, যাতে তারা বোঝার
ক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের আগ্রহ সম্পর্কে কতটুকু সামর্থ্য রয়েছে তা বুঝতে
পারে। বিশেষ করে ৯ম শ্রেণিতে তারা গ্রুপ নির্ধারণ করতে পারবে সহজেই—কলা,
বিজ্ঞান, নাকি ব্যবসায়।
এ প্রসঙ্গে নিজের কথা বলতে পারি- বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভুল তথ্যের
কারণে কলা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করি। বিজ্ঞানে ব্যাপক ও অকৃত্তিম আগ্রহ থাকলেও (আজও অপরিসীম
আগ্রহ রয়েছে, বিজ্ঞানের
লেখা-দেখা-শোনা এখনও আগ্রহের শীর্ষে) শুধু সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ক্যারিয়ারচ্যুত
হয়েছি।
সরকারি ও নির্দিষ্ট কিছু পেশা নির্ভরতার কারণে অনেকে অনুমান করে বলেন, কোনো বিষয় নিয়ে
পড়ালেখা করতে চাইলে তা সম্পন্ন করতে কত বছর লাগতে পারে তা জানেনা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।
ক্যারিয়ার নিয়ে আগ্রহ কম। বেশিরভাগেরই কোনো ব্যাকআপ প্লান বা বিকল্প পরিকল্পনা নেই।
এতেই বোঝা যায়, ক্যারিয়ার
গাইডেন্স বা কাউন্সেলিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু শিক্ষার্থী নন, তাদের অভিভাবকদের
জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দ্বাদশ শ্রেণি সম্পন্ন হওয়ার আগে স্নাতক পর্যায়ে পছন্দের
বিষয় কি হবে তা বুঝতে ও বেছে নিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, এরপর নিজের জীবনের
পেশাগত গতিপথ বাছাই করে নিতে হবে এবং ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ধাপে ধাপে তা উতরে
যেতে হবে সাফল্যের সঙ্গে।
ক্যারিয়ার কাউন্সিলরা বলেন, পেশাগত জীবনে আমাদের অভিজ্ঞতা যত বাড়বে, আগ্রহও বৃদ্ধি পেতে
থাকবে। একই ভাবে ক্যারিয়ার সুইচ বা পরিবর্তন করা কিংবা একাধিক পেশায় নিজেকে জড়িয়ে রাখা
বাড়তে থাকবে।
ক্যারিয়ার গাইডেন্স সঠিক হলে একজন শিক্ষার্থী বা পেশাজীবির মধ্যে আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি
পাবে। তিনি নিজের সামর্থ্য,
মূল্যবোধ, আগ্রহ, দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্ব
ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ স্পষ্ট হবে। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে
কর্মজীবন সাফল্যের হবে।
শুধু তা-ই নয়, ক্যারিয়ার
এক্সপ্লোরেশন বা অন্বেষণ করা সহজ হবে। যে বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করুন না কেন, যে পেশায় থাকুন
না কেন, কর্মক্ষেত্রের
বিশাল জগতে নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিজের অ্যাবিলিটি বা দক্ষতা
কাজে লাগাতে পারবেন। যেমন চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় যুক্ত হতে পারবেন।
ধরুন, লেখালেখি
কিংবা ডেটা অ্যানালাইসিস নিয়ে আপনি দ্বিধায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
কারো সঙ্গে/বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। তাহলে এই পেশার সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা
এবং কি দক্ষতা প্রয়োজন তা জানতে পারবেন। এই পদের দায়িত্ব, কর্তব্য, বেতন, ভাতা প্রভৃতি সম্পর্কে
অবগত হতে পারবেন। এরপর নিজের আগ্রহ, লক্ষ্য ও দক্ষতার সঙ্গে সহজে পেশাটিকে মিলিয়ে নিতে পারবেন।
এভাবে ভবিষ্যত সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
তাই শুরুতে লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত
পেশাজীবি আপনাকে সহায়তা করতে পারবেন। নিজের নেটওয়ার্কিং স্কিল বৃদ্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে কর্মরত পেশাজীবিদের সঙ্গে খাতির জমাতে পারেন। তাদের হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ
নিতে পারেন।
বর্তমান সময় ও যুগে ক্যারিয়ার গাইডেন্স পরম গুরুত্ব বহন করে। আপনি যেখানেই পড়ালেখা
করে থাকেন না কেন কিংবা যে পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করেন না কেন, সঠিক দিকনির্দেশনা
আপনাকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপ সহজে, নির্বিঘ্নে পার
করতে পারবেন। ক্যারিয়ারের জন্য নতুন কোর্সে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা যাচাই
করতে পারবেন। এমনকি জুনিয়রদের জন্য নতুন পথ বাতলে দিতে সক্ষম হবেন।
আপনি জেনে হয়ত খুশি হতে পারেন, বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ক্যারিয়ারভিত্তিক নিউজলেটার
প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠান দেশ ক্যারিয়ার শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং করছে। এজন্য
আপনাকে contact.deshcareer@gmail.com
ইমেইলে যোগাযোগ করে আগ্রহ ব্যক্ত করতে হবে।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google