শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর ১০ উপায়
BY
Nadim Majid
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় আমাদের নেটওয়ার্ক খুব ছোট থাকে। খুব কাছের
বন্ধু-বান্ধব ছাড়া তেমন পরিচিত থাকে না। গ্রাজুয়েশনের পরে চাকরি খুঁজতে গেলে নানা বিড়ম্বনায়
পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ
কিছু ধাপ তুলে ধরা হয়েছে-
১. এলামনাইদের সাথে সম্পর্ক গড়ুন: আপনি যে স্কুল-কলেজ
থেকে পড়াশোনা করেছেন, সেখানকার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেককেই দেখবেন ভাল কোনো অবস্থানে
গিয়েছে, হতে পারে তারা ব্যবসা করছে, ভাল কোনো জায়গায় চাকরি করছে। এমন প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের
খুঁজে বের করুন। তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ুন।
২. নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ খুঁজুন: চাকরি কিংবা ব্যবসা-
সবজায়গায়-ই নেটওয়ার্ক দারুন কাজ করে। কলেজ শিক্ষার্থী, স্কুলের শিক্ষার্থী, কোনো ক্লাব,
এসোসিয়েশনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকলে তা কাজে লাগান। বিশ্ববিদ্যালয় বা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান
কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া, স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ আসলে কাজে লাগানো, সরকারি-বেসরকারি
কোনো প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি এবং ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে নিজের নেটওয়ার্ক বাড়াতে
পারেন।
৩. সমজাতীয় গ্রুপে যোগ দিন: আপনার হয়ত বই পড়তে
ভাল লাগে, আপনি বুক ক্লাবে যোগ দিতে পারেন। ভাল লাগে রান্না করতে, যোগ দিতে পারেন কুকিং
ক্লাবে। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে উদ্যোক্তা হওয়ার। উদ্যোক্তাদের কোনো সংগঠনে যোগ দিতে পারেন।
এসব ক্লাব বা সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অনেকেই আসে। অনেকে ইন্ডাস্ট্রিতে সিনিয়র,
তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। একসময় এ পরিচয় আপনার নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর জন্য
বেশ কাজে দিবে।
৪. জব ফেয়ারে অংশ নিন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাইরে কোথাও আয়োজিত
জব ফেয়ারে অংশ নিন। জব ফেয়ারে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার পরিকল্পনা থাকতে হবে। আপনি যে
সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগদাতাদের সাথে কথা বলতে চান, তাদের একটি তালিকা তৈরি করুন। জব
ফেয়ারে যাওয়ার আগেই সে সব প্রতিষ্ঠান কি নিয়ে কাজ করে সে সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা
নিন। তাদেরকে প্রদান করার জন্য আপনি আপনার রিজিউম বা বিজনেস কার্ড সাথে নিন। জব ফেয়ারে
সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করবেন।
৫. আপনার প্রফেসরদের সাথে পরিচিত হোন: অনেক শিক্ষার্থীদের
দেখা যায়, তারা তাদের সিভির রেফারেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের তথ্য দিয়ে থাকে।
কিন্তু নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সে সব শিক্ষার্থীদের ভেরিফাই করার জন্য প্রফেসরদেরকে ফোন
বা ইমেইল করলে সে সব প্রফেসরগণ সে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে সেভাবে তথ্য দিতে পারে না।
এতে সে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে নিয়োগদাতার একটি বিরুপ ধারণা তৈরি হয়। অতএব, আপনার প্রফেসরদের
সাথে পরিচিত হোন। অফিসের সময়ে তাদের সাথে কথা বলুন। আপনার কোর্স, এসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা
করুন। এটি সবসময়-ই করুন। শুধুমাত্র কোনো কিছু বুঝতে না পারলেই তাদের কাছে যাবেন, বিষয়টি
এমন নয়। প্রফেসরগণ আপনার সম্পর্কে জানলে তা ইন্টার্নশিপ অথবা চাকরির ক্ষেত্রে কাজে
দিবে। অনেকসময় তারা নিজেরাই আপনাকে ডেকে কাজ দিতে পারে।
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্সদের কাজে লাগান: আপনার বিভাগের ক্যারিয়ার
কাউন্সিলরের কাছ থেকে স্লট বুকিং নিন। তার কাছ থেকে জেনে নিন, নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য
আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কি কি করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কখন জব ফেয়ার আয়োজন করে, ক্লাব
এবং এক্সট্রা কারিকুলার মেলা কখন হয়, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ প্লেসমেন্ট করার
সুযোগ রয়েছে।
৭. একটি বিজনেস কার্ড তৈরি করুন: কোনো প্রোগ্রামে বা
নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে কোনো শিক্ষার্থী অন্য একজনকে নিজের বিজনেস কার্ড দিলে এতে সে শিক্ষার্থীর
পেশাদার মনোভাব ফুটে উঠে। সে বিজনেস কার্ডে আপনার কিছু ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ইমেইল,
ফোন নাম্বার, বর্তমান ঠিকানা, আপনি কি ধরনের কাজে যুক্ত হতে ভালবাসেন, আপনার সোশাল
মিডিয়ার ঠিকানা থাকতে পারে।
৮. একটি পেশাদার অনলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: আপনার লিংকডইন প্রোফাইলকে
সুন্দর করুন। কোনো ধরনেরর বানান ভুল ছাড়াই আপনার অভিজ্ঞতাগুলো লিংকডইন পোস্টের মাধ্যমে
বর্ণনা করুন। আপনার স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রম, অনলাইন কোর্স,
সাটিফিকেটের তথ্য সে প্রোফাইলে যোগ করুন। তারপর আপনার ক্যারিয়ারের সাথে যায়, এমন ব্যক্তিদের
সাথে লিংকডইনে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠান। অনুরোধ পাঠানোর সময় তাদেরকে সুন্দর একটি
নোট পাঠানোর কথা ভুলবেন না।
৯. পেশাদার আচরণ করুন: বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পেশাগত অভিজ্ঞতা
খুব-ই কম থাকে। তাই, তাদের প্রথম চাকরি পাওয়াটা একটু কঠিন থাকে। আপনার আকাঙ্ক্ষা অনুসারে
কোনো চাকরির সুযোগ আসলে আত্মবিশ্বাসী থাকুন। নিয়োগদাতার মনে আস্থার জায়গা তৈরি করুন।
নিয়োগদাতাকে দেখান যে আপনি আপনার কাজে খুবই সিরিয়াস, ফলে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও তা
সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
১০. নেটওয়ার্ক মেইনটেইন করুন: কোনো জব ফেয়ারে একজন
নিয়োগদাতার সাথে পরিচয় হল, তার নাম্বার নিয়ে আসলেন, লিংকডইনে যুক্ত হয়ে তারপর হারিয়ে
গেলেন, তাহলে সে নেটওয়ার্কের কোনো মূল্য থাকবে না। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর
নেটওয়ার্ককে ফলোআপ করুন। বিশেষ দিবসে সে ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠাতে পারেন। জন্মদিনে সে
ব্যক্তিকে সামাজিক মাধ্যমে বা বাস্তবে সুন্দরভাবে উইশ করতে পারেন। লিংকডইনে সে ব্যক্তির
কোনো পোস্ট সামনে আসলে সুন্দর এবং গঠনমুলক কোনো কমেন্ট করতে পারেন। এতে আপনার নেটওয়ার্ক
তৈরির পাশাপাশি মেইনটেইনও হবে।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার সময় নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন, মাথায় এমন চিন্তা থাকলে
বাদ দিন। নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজ শুরু করুন এখন-ই।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google