Home পরামর্শ

সহশিক্ষা কার্যক্রম : বয়ে আনবে আলো

সহশিক্ষা কার্যক্রম : বয়ে আনবে আলো

৮ মিনিট read

Friday, June 23rd 2023



এখনকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় যে পরিমাণ অংশগ্রহণ করেন সেই তুলনায় এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, নেতৃত্ববোধ, মানবিকবোধ, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ইতিবাচকতায় দক্ষ করে তুলতে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের পছন্দের বিষয়ে অতিরিক্ত যোগ্যতা অর্জন শিক্ষার্থীদের জীবনে বয়ে আনতে পারে অনেক সুফল। শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির গুরুত্ব, যুক্ত হওয়ার নানাবিধ কারণ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের পছন্দের বিষয়ে অতিরিক্ত যোগ্যতা অর্জন করাই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বা সহশিক্ষা কার্যক্রমের লক্ষ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মূল সিলেবাস কিংবা পুঁথিগত বিষয়ের বাইরে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতার জায়গাগুলোয় উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে যে কাজগুলো করে থাকেন সেগুলোই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি। যে কোন কাজ যা আপনার বিশেষ কোন গুণের প্রকাশ ঘটায় এবং সরাসরি পড়াশোনার সাথে সম্পর্কিত নয়, তাই সহশিক্ষা কার্যক্রম।

 

শিক্ষার্থীদের কেন জরুরি

এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি একদিকে মেধাকে শানিত করে, অন্যদিকে অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করার সুযোগ তেরি করে দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঠ্য বইপত্রের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে একজন শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্ববোধ, মানবিকবোধ, সমাজরাষ্ট্রনিজের বাস্তব জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞ থাকার সম্ভবনা অনেক বেশি রয়েছে। এছাড়া আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে অন্যান্য কিছুর পাশাপাশি প্রয়োজন এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি। যা আপনার স্বপ্ন পূরণে পাথেয় হতে পারে। একজন শিক্ষার্থীর এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থেকে তার নানা দক্ষতা সম্পর্কে জানা যায়। তাই একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিও সম গুরুত্বপূর্ণ। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ, অভিজ্ঞতা লাভ, সামাজিকীকরণ, চাকরির প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখা, দলগতভাবে কাজের শিক্ষা অর্জন, সামাজিক সুযোগগুলো উম্মুক্ত হওয়া, আত্মসম্মান বৃদ্ধি, নিজের আগ্রহ প্রকাশ করার সুযোগ অর্জন, একাডেমিক পারফরমেন্স উন্নত করা, সময়ের সদ্ব্যবহার, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি সুযোগসুবিধা ও উপকারিতা অর্জিত হয় এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থেকে।

 

সহশিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত

প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন ধরনের সংগঠন বা ক্লাব রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। যেমন: বিতর্ক, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, নাটক, গান, কুইজ, তবলা, বাঁশি বাজানোর চর্চা, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, সিনেক্লাব, ম্যাথ বা ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, স্বেচ্ছাসেবকের কাজ, বইপড়া ক্লাব, বিজ্ঞানচর্চা ক্লাব, দেয়ালিকা বের করা ইত্যাদি। সাক্ষরতা অভিযান, স্বাস্থ্য সপ্তাহ পালন, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ইত্যাদি কর্মসূচিও পরিচালনা করে থাকেন শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো। স্কুল পর্যায়েই রয়েছে স্কাউট, গার্লস গাইড। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যারা নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবা ছাড়াও আকস্মিক ও জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি (যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী সময়ের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রমে) অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া যদি আপনি পারিবারিক কোন দায়িত্ব পালন করেন সেটাও আপনার এক্সট্রা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মোটকথা, পড়াশোনার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয় কিন্তু দক্ষতার প্রমাণ হিসবে কাজ করবে- এমন যে কোন কিছুই এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

 

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কিসে

একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি যে কোন এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নিতে পারেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম- উৎসব আয়োজন, খেলাধুলা, গানবাজনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নাটক, সামাজিক সংগঠন। এছাড়া গল্প প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, স্কুল ম্যাগাজিন, দেয়ালিকা প্রকাশ, ভাস্কর্য তৈরী, অ্যালবাম তৈরী, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। তাছাড়া আপনার ভালো লাগার যেকোনো বিষয়ে অংশ নিতে পারেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষাগবেষক রায়হান আরা জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কেবল তত্ত্বীয় জ্ঞানচর্চার জায়গা নয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা, মননশীলতা ও মনুষ্যত্ব বিকাশে কাজ করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। বিশ্বের নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে, যুক্তি দিয়ে কথা বলতে, দৃঢ় কিন্তু শোভন উপায়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতে, নেতৃত্ব দিয়ে কোনো প্রোগ্রাম সফল করতে শেখাও জীবনের জন্য জরুরি। আর এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিচালনা করে এমন বেশ কিছু সংগঠন ও ক্লাব রয়েছে। খুব ভালো কাজ করা সংগঠনের একটি হলো বাঁধন। বাঁধনের কর্মী শিক্ষার্থীরা সব রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রোগ্রামে রেঞ্জার শিক্ষার্থীরাও কাজ করে দায়িত্বের সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃহল ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও চাহিদার তুলনায় সহশিক্ষাক্রমিক কার্যযক্রমের পরিমাণ কম। সব আয়োজন নিয়মিতও নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে এমন আয়োজনও নগন্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বাড়াতেও সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য, সহনশীল, পরমতসহিষ্ণু, ধর্মনিরেপক্ষ ও উদার মানসিকতার জন্য সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক রাউফুন নাহার বলেন, ‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। তাদের ভেতরে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। একজন শিক্ষার্থী যখন তার আগ্রহ ও পছন্দের কাজের সাথে যুক্ত থাকে, সেখান থেকে প্রচুর আনন্দ ও মানসিক শক্তি আসে। যা তাকে তার জীবনের অন্যান্য মানসিক চাপগুলির সাথে মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। তাছাড়া এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফলে যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিপদ বা মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যায়, সহজেই অন্যদের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে। মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাস্থবান থাকার জন্য এই ধরনের সামাজিক সহযোগিতা বা পারস্পরিক সহযোগিতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম যখন বিকাশমূলক না হয়ে অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক হয় তখন তা খুব বেশি সহযোগিতা করে না বরং মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেইসাথে টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইসব কার্যক্রমের অতিরিক্ত চাপ যদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, বিশ্রাম বা পারিবারিক বন্ধন ও দায়িত্বের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তা একজন শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ আমাদের মানসিক প্রশান্তি এই সবকিছুর ভারসাম্যের ওপরও নির্ভর করে।’

 

 

 

 

 

 

 

হাতের কাছে সুযোগ না থাকলে

 

হয়ত আপনি কবিতা লিখতে ভালবাসেন। চান ভরা মজলিসে সবার সামনে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করতে। কিন্তু নিজের ক্যাম্পাসে বা কর্মজীবনে এ সুযোগ হাতের কাছে নেই। তাই, বলে ঘাবড়ে যাবেন না। নিজের চিন্তা-ভাবনার সাথে যায় এবং আপনার নিজের জন্য সুবিধাজনক, এমন কোনো সংগঠনের সাথেও কাজ করতে পারেন।




POST A COMMENT

To comment in this Blog, SignIn with Google

OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

10 Min read

Friday, February 2nd 2024

দিনে সাতটি কাজ কার্যকরভাবে করার উপায়

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

10 Min read

Saturday, January 27th 2024

কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করবেন

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

10 min read

Saturday, January 20th 2024

সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নেয়ার ১১ ধাপ

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

10 Min read

Saturday, January 6th 2024

ক্যারিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করুন

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

10 Min read

Friday, December 22nd 2023

শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মউন্নয়নমূলক ১০ বই

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট

5 Min read

Saturday, December 16th 2023

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয় পাঁচ গ্যাজেট