স্টক ফটোগ্রাফির জন্য কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই
উন্নত বিশ্বে স্টক ফটোগ্রাফি খুবই জনপ্রিয়।
বিশ্বব্যাপী এর বাজারও মন্দ নয়। জনপ্রিয় এ বাজারের হিস্যায় বাংলাদেশ খুবই পিছিয়ে। অল্প
পরিশ্রমে যে কেউ স্টক ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান আলোছায়ার গল্পের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্টক ফটোগ্রাফার সৈয়দ মেহেদী হাসানের সাথে কথা বলে স্টক
ফটোগ্রাফি নিয়ে লিখেছেন অরণ্য সৌরভ
স্মার্টফোন কিংবা স্মার্টপ্রযুক্তির এই যুগে
ফটোগ্রাফির সাথে কে পরিচিত নয়! দু’পা মেলিয়া ধরলেই যেন হাতে থাকা মোবাইল বা ডিজিটাল
ক্যামেরায় ক্লিক শুরু করে দেই। এটা শখের যেমন, তেমনি নেশারও। শখ
বা নেশার যাই হোক না কেন চাইলে কিন্তু আপনিও পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে বেছে নিতে পারেন।
অনেকেই ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে। মনোজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত শখের কাজের
মাধ্যমে অর্থ (টাকা) উপার্জন অবশ্যই মন্দ নয়। ফটোগ্রাফি হলো নিজের দক্ষতার পাশাপাশি
শৈল্পিক জ্ঞানের বহিংপ্রকাশ।
বরিশালের মাটি ও বায়ুতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা
সৈয়দ মেহেদী হাসান-এর। বড়াকোঠা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক ও অমৃতলাল দে কলেজ
থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যুক্ত হয়েছিলেন ফটোগ্রাফিক
সোসাইটির সাথে। শুরু করেছিলেন টুকটাক ইভেন্ট সম্পন্ন করার কাজ। ধীরে ধীরে কাজের পরিসর
বাড়ায় ‘আলো ছায়ার গল্প’ নামে গড়ে তুললেন একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন যাবৎ
বিভিন্ন স্থানের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করা ছিল তার শখ বা নেশা। ২০১৪ সালের দিকে হুট
করে ভাবলেন ছবিগুলো তো বিভিন্ন স্টক ওয়েবসাইটেও আপলোড করা যায়। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
শুরু করলেন স্টক সাইটে ছবি আপলোড করা। প্রথম ছবিটি একটি ক্যালেন্ডারের জন্য বিক্রয়
হয়েছিল ছ’হাজার টাকায়। ছবি বিক্রি হওয়া শুরু হলে নিয়মিত হলেন স্টক সাইটে। হয়ে উঠলেন
একজন স্টক ফটোগ্রাফার, বেছে নিলেন ক্যারিয়ার হিসেবে।
ফটোগ্রাফি একটি শিল্প, যার মাধ্যমে অতি সাধারণ কিছুকে অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়। এককথায় বললে, খুব সাধারণ একটা জিনিসের শৈল্পিক দিক তুলে ধরাই ফটোগ্রাফি। সৈয়দ মেহেদী হাসানের
মতে, স্টক ফটোগ্রাফি হচ্ছে ফটোগ্রাফির একটি বাণিজ্যিক দিক। তিনি বলেন, ‘আমার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা আছে। এর মধ্যে কিছু ছবি আমি বিভিন্ন
ওয়েবসাইটে পাবলিশ করেছি, যা অনেকেই কিনেছে। এর মাধ্যমে সুযোগ
হলো আয় করার।’
যে কাজে ব্যবহৃত হয়
সৈয়দ মেহেদী হাসানের মতে, স্টক ফটোগ্রাফির ব্যবহার নির্ভর করে ক্লায়েন্টের প্রয়োজনের উপর। তিনি বলেন, ‘বিক্রি করা ছবিগুলো বিভিন্ন এডভার্টাজিং, নিউজ, ডকুমেন্টেশন, কনটেন্ট ক্রিয়েশন-এসব কাজেই সাধারণত
ব্যবহৃত হয়ে থাকে।’
স্টক ফটোগ্রাফির চাহিদা
ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে চোখ বন্ধ করে
বলা যায়,
স্টক ফটোগ্রাফির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আলো ছায়ার গল্পের
প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ ফটোগ্রাফার সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ক্ষেত্রে এর চাহিদা অনেক। সকল কনটেন্ট ক্রিয়েটর চান তার কনটেন্টে
নতুনত্ব আনতে। সেজন্য অনেকেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ছবি কিনে ব্যবহার করেন। পাশাপাশি
ডকুমেন্টেশন, এডভার্টাজিং এর ক্ষেত্রেও এর চাহিদা অনেক।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়াগুলো যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো ঘটনার নিউজ করার
জন্য সেই দেশের ফটোগ্রাফারদের থেকেই ঐ ঘটনার ছবি কিনে নেন। এর জন্য অনেক নিউজ এজেন্সীও
আছে যারা এই ছবি বিক্রির কাজটা পরিচালনা করে থাকে।’
যেভাবে শুরু করবেন
‘স্টক ফটোগ্রাফি শুরু করতে তেমন কিছুই লাগে না, শুধু ছবি তুলতে পারলেই হয়’ এমন সোজাসাপ্টা উত্তর সৈয়দ মেহেদী হাসানের। তিনি বলেন, ‘যেকোন ঘটনার ইনস্ট্যান্ট ছবি, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের
ছবি, প্রোডাক্ট, যেকোনো কিছুর ছবি দিয়েই স্টক ফটোগ্রাফি
করা সম্ভব। বাসায় থাকা একটা পুতুলের ছবি তুলেও তা করা সম্ভব।’
যেথায়, যেভাবে বিক্রি এবং যোগ্যতা
স্টক ফটোগ্রাফগুলো বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন
ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমন: Getty images, shutterstock, Alamy, 500px, EyeEm ইত্যাদি ওয়েসাইটে স্টক ফটোগ্রাফ বিক্রি হয়। আবার zuma press,
pacific press agency এই ওয়েসাইটগুলোতে মূলত নিউজ সম্পর্কিত
এবং এডিটরিয়াল ফটোগ্রাফ বিক্রি হয়। এই সাইটগুলো ভিজিট করে নিয়মনীতি ভালোভাবে পড়ে
নিয়ে,
নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিজস্ব ইউনিক ছবি আপলোড করা শুরু
করতে হবে। সৈয়দ মেহেদী হাসানের মতে, ‘স্টক ফটোগ্রাফির
জন্য আলাদা কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই।’ ‘স্টক ফটোগ্রাফির জন্য সমসাময়িক বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে ধারণা থাকা জররী এবং কখন কি ধরনের ছবির চাহিদা বেশি তার সম্পর্কে জানা
জরুরিটাই যোগ্যতা’, যোগ করেন মেহেদী হাসান। বেসিক ক্যামেরা
সেটআপ থাকলেই স্টক ফটোগ্রাফি করা যায় বলেও মনে করেন তিনি।
কারা আসবেন
যারা ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন
তাদের জন্য স্টক ফটোগ্রাফি একটি এক্সট্রা আয়ের উৎস। তাই তাদের এই সেক্টরে আশা উচিৎ
বলে মনে করেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফি
যারা করে থাকেন এটা তাদের জন্য একটা অতিরিক্ত আয়ের উৎস। আমরা এখন বিভিন্ন সময় মোবাইল
দিয়েই ছবি তুলে থাকি, যা আমরা স্টক ফটো হিসেবে বিক্রি করতে
পারি।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশের তরুণদের স্টক ফটোগ্রাফিকে ক্যারিয়ার
নেওয়ার বিষয়ে সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের
যারা ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চান তাদের জন্য এটি একটি ভালো আয়ের উৎস হতে
পারে।’
আয়ের পাল্লা
সমসায়িক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ছবি তুলতে
পারলে স্টক ফটোগ্রাফি হতে পারে একটি ভালো আয়ের উৎস। ইনস্ট্যান্ট কোনো ঘটনার ছবি বা
কোন ধরনের ছবির চাহিদা বেশি, সে অনুযায়ী ছবি তুলতে
পারলে এখান থেকে মোটা অঙ্কের আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন সৈয়দ মেহেদী হাসান।
POST A COMMENT
OTHER POSTS OF পরামর্শ CATEGORY
Copyright © 2023
By Bangla Puzzle Limited
To comment in this Blog, SignIn with Google